ভেবে দেখুন! আপনি মাত্র যে শ্বাস গ্রহন করলেন তা আপনার শরীরের কোন অংশে বা কোথায় নিলেন? আপনার বুকে নাকি পেটে? 

পেটে নিয়েছেন নিশ্চয়ই! ৮০-৯০% মানুষ ঠিক এভাবেই শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহন ও ত্যাগ করে থাকে।

কিন্তু এই পেটে শ্বাস নেবার পদ্ধতিটি সঠিক নয়! যখন আপনি বুক ভরে শ্বাস নেন তখন আপনার ফুসফুস পরিপূর্ন মাত্রায় প্রসারিত হয়। 

এতে অনেক পরিমানে অক্সিজেনই ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে। আর তখনই ফুসফুস কাজ করতে পারে তার নিজের সম্পূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে। ফলে নিমিষেই ক্লান্তি ভাব দূরীভূত হয়; সারাদিন শরীর-মন থাকে তরতাজা, সতেজ। 

কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে, বেশিরভাগ মানুষই এ ক্ষেত্রেই শ্বাস গ্রহন করে থাকে পেট ভরে। যার পরিনামে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা ৫০ ভাগই অপূর্ন বা অব্যবহৃত রয়ে যায়।

এরই ফলে আমাদের দেহ-মনে নানারকম নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ; যেমন: হাপিয়ে যাওয়া, ক্লান্তি, অবসাদ, অশান্তি, মানসিক অস্থিরতা।

শ্বাস প্রশ্বাস চর্চা! যেটাকে আমরা অনেক সময় দম চর্চাও বলে থাকি; নিয়মিত এ শ্বাস- প্রশ্বাস চর্চা মাধ্যমে আমরা প্রানোবন্ত হতে পারি খুব সহজেই।

অনেকেই ভাবতে পারে, “জন্ম থেকে মৃত্যু– এ সময় অবধি আমরা তো শ্বাস-প্রশ্বাসই নিয়ে যাচ্ছি।

এতে আদোউ চর্চার কিছু আছে কি? 

দম না নিলে তো বাচা দায়। এটা তো নিজে থেকেই নিচ্ছি প্রতিনিয়ত। আলাদা করে এর চর্চার প্রয়োজন ঠিক কোথায়?”

প্রয়োজন আছে অবশ্যই। বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুসারে তারা শ্বসনতন্ত্রের বেশিরভাগ অসুখের কারন দর্শীয়েছেন, সঠিক ভাবে শ্বাস- প্রশ্বাস নিতে না পারাকে। কেবল নিয়মিত বুক ভরে শ্বাস- প্রশ্বাস নেয়ার মাধ্যমেই আপনি এসকল হৃদরোগ এড়ায়ে যেতে পারেন। সেই সাথে বেড়ে যাব আপনার প্রানশক্তি, প্রাবন্ততা, কার্য উদ্দীপনা। 

অবাক হচ্ছেন? অবাক হবারই কথা। 

কিন্তু এটাই সত্যি যে, দেহ ও মনের মধ্যকার সেতুবন্ধন তৈরি করে এ শ্বাস-প্রশ্বাস চর্চা। শ্বাস-প্রশ্বাস চর্চায় অভ্যস্ত হতে পারলে মানসিক অশান্তি, স্নায়ু ও পেশীর টেনশন, এজমার মত শ্বাসকষ্ট মূলক রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারেন।

বিশেষজ্ঞরা এখন বলছেন, যেকোনো প্রকার শ্বাসনালীর সমস্যা থেকে বাচতে সঠিক নিয়মে শ্বাস- প্রশ্বাস চর্চা হতে পারে সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসা। 

আসুন জেনে নেই শ্বাস-প্রশ্বাস চর্চার প্রক্রিয়া :

এ শ্বাস- প্রশ্বাস চর্চার প্রক্রিয়াটিকে মূলত বলা হয় প্রানায়ম। কেননা, শ্বাস গ্রহনের মধ্য দিয়ে শরীরে অক্সিজেনের পাশাপাশি এক প্রকার প্রানশক্তিও প্রবেশ করে থাকে। প্রানায়ম বিভিন্ন ধরনের হয়্র থাকে। এদের মধ্য থেকে ফুসফুস ও হৃদপিন্ডের সুস্থ্যতার জন্য দুটি প্রানায়ম আপনি নিয়মিত করে নিজেকে সুস্থ্য রাখতে পারেন।

    • সহজে উজ্জীবন 

মেরুদণ্ড সোজা রেখে দাড়ান অথবা বসেন। একদম সোজা থাকবেন। নাক দিয়ে ধীরে ধীরে বুক ফুলিয়ে দম নিন। মনে রাখবেন, পেট ফুলিয়ে নয় বরং বুক ফুলিয়ে। 

২-৩ বার এটা প্র‍্যাক্টিস করলেই আয়ত্তে এসে যাবে। ১,২ সেকেন্ড দম নিয়ে রেখে দিন ভিতরে বাতাসটাকে। এবার ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে ছাড়ুন। দ্রুত ছেড়ে দিবেন না। 

যতটা সময় ধরে দম নিয়েছেন তার চেয়ে একটু বেশি সময় নিয়ে দমটা ছাড়ুন। এভাবে ১ বার করুন। দম নিন, দম ছাড়ুন। দিনে ৩-৪ দফা করুন।

    •  নাসায়ন বা এক নাসা প্রানায়ম 

নাসায়ন বা এক নাসা প্রানায়ম কার্য পদ্ধতি শুনতে ভারী বা কঠিন মনে হলেও এর চর্চা খুবই সহজ। ডান হাতের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে নাকের ডান পাশের ছিদ্র চেপে ধরুন। 

রবার বাম পাশের ছিদ্র দিয়ে দম নিয়ে অনামিকা দিয়ে বাম পাশের ছিদ্রটি বন্ধ করুন। ডান ছিদ্র দিয়ে দম ছাড়ুন। 

যেটা কিছুক্ষন আগে আপনি বন্ধ করেছিলেন বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে, সেই বৃদ্ধা আঙুল সরিয়ে এবার আপনি ডান ছিদ্র দিয়ে দম ছাড়ুন। 

কারন নিয়েছেন বাম ছিদ্র দিয়ে। ডান ছিদ্র দিয়ে দম ছাড়ার পর পুনরায় ওই ডান ছিদ্র দিয়ে দম নিন। 

তারপর একই ভাবে ডান দিকটা বন্ধ করে আবার বাম দিকটা দিয়ে দম ছাড়ুন। এভাবে ১০ বার করে করুন। এটিও আপনি করতে পারেন দিনে ৩-৪ বার।

এভাবে অভ্যাসে পরিণত করুন এবং নিয়মিত এটি চর্চা করার মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হতে দিন। এটা করার পর নিজের দিকে তাকালে অনুভব করতে পারবেন আপনার শারীরিক ভাবে অনেকটা প্রানোবন্ত লাগছে নিজেকে। 

অনেকটা সতেজ মনে হচ্ছে মনকে। এভাবে প্রতিদিন ৩-৪বার করতে পারেন, স্বাভাবিক মনে হলে এর বেশিও করতে পারেন। 

দিনের যে কোনো সময়, যে কোনো স্থানে  বাসায়, অফিসে, ক্লাসে কিংবা খেলার মাঠে এটির চর্চা রাখা সম্ভব। এর জন্যে কোনো বিশেষ প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়না কিংবা কোনো ভালো পোশাক, পরিচ্ছন্নতা, যন্ত্রপাতি।

তাহলে আর ভাবনা কিসের? 

শুরু করে ফেলতে পারেন,  শ্বাস প্রশ্বাস চর্চা। টানা তিন মাস করলেও লক্ষ্য করতে পাবেন নিজের মধ্যকার পরিবর্তন। রোগ-শোক কোথাও কিচ্ছু নেই, আছে শুধু প্রান-স্বচ্ছতা। 

কারন ফুসফুসে পর্যাপ্ত পরিমানে অক্সিজেন যাওয়াটা যে আপনার শরীরে কি ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে তা আপনি এই শ্বসনতন্ত্রের চর্চা মাধ্যমে নিজেই অনুভব করতে পারবেন।

লেখিকা

আয়েশা সিদ্দিকা হামীম

ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট 

YSSE 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *