শরীর ও মন একটি একে অপরের পরিপূরক। দুটিকে নিয়েই আমাদের স্বাস্থ্য। তবে স্বাস্থ্য বলতে আমরা কেবল শারীরিক দিকটিকেই বুঝি৷ স্বাস্থ্যের আরো একটি বিশাল দিক নিয়ে রয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য। প্রযুক্তি নির্ভর যুগে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার হার যেনো দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। বিষয়টি নিয়ে অনেক গবেষক এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ব্যক্তির মনের উপর নির্ভর করে তার কর্ম ও যাবতীয় কিছু৷ মনের উপর বিভিন্ন ঘটনার সমবেশ ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে যা পরবর্তীকালে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কর্ম ক্ষেত্রসহ সকল জায়গায় নিজের শারীরিক উপস্থিতির পাশাপাশি মানসিক উপস্থিতিকে নিশ্চিত করতে মনের যত্ন নেওয়ার বিকল্প নেই। ব্যক্তি যদি নিজের মনকে ভালো রাখতে না পারে তবে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে এরফলে কর্মস্থলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে আবার পারিবারিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। শরীর ও মনকে ব্যালেন্স করে চলতে পারলেই সুস্থতা নিশ্চিত হবে। মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে নিচের পন্থাগুলো অনুসরণ করতে পারেন:
নিজেকে ভালোবাসা:
আপনি যদি নিজেকে ভালোবাসতে না পারেন তবে নিজের শরীর ও মনের যত্ন নিতে পারবেন না। নিজেকে ভালোবাসার মাধ্যমে আপনি নিজ মন সম্পর্কে যত্নশীল হতে পারবেন। মনের যত্ন নিতে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারেন। প্রথমত, নিজের প্রিয় কাজগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া। যে কাজগুলো আপনার মনে আনন্দ দেয় বা আপনি করতে পছন্দ করেন সেসব কাজ আপনার অবসর সময়ে বা যখন খুবই খারাপ সময়ের ভেতর দিয়ে যান তখন করতে পারেন এতে করে মাইন্ড রিফ্রেশিং হবে এবং কাজে উৎসাহ যোগাবে। দ্বিতীয়ত, নিজের কাজের জন্য নিজেকে উপহার দেয়া। কোন একটি কাজ সম্পন্ন করার পর ছোট কোন উপহার হলেও নিজেকে দেওয়া৷ সেটা হতে পারে কোন একটি কলম,বা আপনার কোন পছন্দের জিনিস।এতে করে আপনি যেমন কাজে উৎসাহী হবেন নতুন করে তেমনই আবার আপনার মনও ভালো থাকবে। তৃতীয়ত, নিজের জন্য সময় রাখা। সারাদিন আপনি যাই করেন না কেনো একটি নির্দিষ্ট কিছু সময় নিজের জন্য রাখা। হতে পারে ৫মিনিট বা ১০মিনিট। এতে করে আপনি আপনার নিজের অবস্থান ও কাজ সম্পর্কে দিন শেষে নিজের কাছে জবাবদিহিতা করতে পারবেন।
নিয়মিত শরীরচর্চা:
শরীর ও মন একটি অপরটির সাথে জড়িত। শরীরচর্চার মাধ্যমে একদিকে যেমন শরীর ঠিক থাকে তেমনই মনও ভালো থাকে। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনার মাঝে আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং মনের অনেকটা জড়তা কাটানো সম্ভব। এছাড়াও সকালে মেডিটেশন খুবই কার্যকর। আমাদের শরীরকে ফিট রাখতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞরা ব্যায়াম করতে উৎসাহিত করে থাকেন। নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট সময়ে ব্যায়াম করতে পারেন। ব্যায়ামের সময় খেয়াল রাখতে হবে আপনি খুব বেশি শরীরের উপর কসরত করছেন কিনা। প্রথমদিনই অনেক বেশি সময় নিয়ে ব্যায়াম করা ঠিক নয়। আস্তে আস্তে ব্যায়ামের সময় বাড়াতে হবে।
পুষ্টিকর খাবার খাওয়া:
শরীরকে ঠিক রাখতে আমাদের খাদ্য প্রয়োজন। পরিমিত ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের ফলে আপনি শারীরিকভাবে যেমন ফিট থাকবেন তেমনই মনও ভালো থাকবে কারণ অসুস্থ শরীরের কারণে মন-মেজাজও ভালো থাকে না। মানসিক সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতার জন্য পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজনীয়তার জুড়ি নেই। বর্তমানে আমরা নানাভাবে জাংক ফুড খাচ্ছি এতে করে আমাদের শরীরের উপর একটি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।
যন্ত্রের ব্যবহার কমানো:
বর্তমান যুগ প্রযুক্তিনির্ভর যুগ। প্রযুক্তি ছাড়া আমরা যেনো চলতেই পারি না। যন্ত্রের উপর আমরা এতোটাই নির্ভর করছি যে মানবিকতাবোধ আমাদের মাঝে দিনে দিনে আশংকাজনক হারে লোপ পাচ্ছে। যন্ত্রের ব্যবহার একদম করা যাবে না- এমনটা নয়। ব্যবহার করতে হবে তবে তা সীমিত এবং যতটুকু করলেই নয়। আমাদের মাঝে অনেকেই মোবাইল ফোনের দিকে সময়ে-অসময়ে, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে তাকিয়ে থাকি৷ বাচ্চারা খেলার মাঠে না গিয়ে ফোনে বা টিভিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। দশ বছর আগে পেছনের দিকে তাকালে যেরকম চিত্র দেখতে পাবো যে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে বা পরিবারের সবাই মিলে কথা বলছে এক জায়গায় বসে। কিন্তু বর্তমানে তেমনটি নেই। সবাই যন্ত্রের প্রতি আসক্ত। কেউ ফোন ব্যবহার করছে কেউ বা ল্যাপটপ ব্যবহার করছে কেউ বা কম্পিউটারে গেইম খেলছে। মনকে প্রশান্তি দেয়ার মতো কোনকিছুই যেনো করছে না। যন্ত্রের ব্যবহার কমিয়ে সামাজিক, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করণে মনোযোগী হতে হবে।
নিজেকে সক্রিয় রাখা:
নিজের মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন। সংবাদপত্র পাঠ, ক্রসওয়ার্ড মেলানোসহ নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জানা। এছাড়াও নিজের আগ্রহের টপিক রিলেটেড বিভিন্ন ডকুমেন্টরি দেখলে নিজের মন ভালো থাকবে।সর্বোপরি নিজের মন খারাপ হলে মূল কারণ খোঁজা৷ অনেক সময় আমাদের একটি বিষয়ে রাগ করে অন্য একটি বিষয়ের উপর রাগ দেখাই। এরকমটা না করে ব্যক্তি নিজে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস নিতে থাকে তবে পরিস্থিতি বা ব্যক্তির রিয়েকশন অন্যরকম হবে।
আধুনিক যুগে নিজের মনকে ভালো রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। কর্মব্যস্ত দিনে মানুষ নিজের মনের যত্ন নিতে ভুলে যাচ্ছে, এর প্রভাব পড়ছে সম্পর্কগুলোতে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক সম্পর্কে প্রভাব পড়ার ফলে সুইসাইড,মুড সুইং এর মতো ঘটনা অহরহ ঘটছে। নিজের মনকে জানতে হবে, মনের যত্ন নিতে হবে তবেই আমাদের কাজে উৎসাহ ফিরে আসবে।
আরও ব্লগ পেতে এখানে ক্লিক করুন
মোসা.লুভনা আক্তার
ইন্টার্ন
কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট,
YSSE