১৯৫২ সাল ; শুরু হয় বাংলা ভাষাকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার তীব্র আন্দোলন। 

ছাত্র, শিক্ষক, গবেষক ও সাধারণ মানুষেরা যুক্ত হন সেই আন্দোলনে। একটা সময় আন্দোলনে সফল হন বীর বাঙালিরা। 

এই সফলতার পর গবেষকরা অনুভব করেন বাংলা ভাষার চর্চা, গবেষণা ও সংরক্ষণের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন। 

এর তাগিদেই ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা ডিসেম্বর বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন বর্ধমান হাউজে বাংলা একাডেমির সদর দপ্তর স্থাপিত হয়। বর্তমানে বর্ধমান হাউজের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় “ভাষা আন্দোলন জাদুঘর” আছে। 

পূর্ববাংলার প্রাদেশিক সরকার বাংলা একাডেমী পরিচালনা করার জন্য প্রথমে একটি প্রিপারেটরি কমিটি গঠন করে।

মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ ছিলেন কমিটির সম্পাদক এবং তাকে “স্পেশাল অফিসার” হিসেবে অভিহিত করা হতো।

১৯৫৬ সালের ১লা ডিসেম্বর বাংলা একাডেমির প্রথম পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মুহম্মদ এনামুল হকবাংলা একাডেমির প্রথম প্রকাশিত বই হলো আহমদ শরীফ সম্পাদিত, দৌলত উজির বাহরাম খান রচিত, লায়লী-মজনু। 

শুরুর দিকে বাংলা একাডেমী ছিল একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। পরে ১৯৫৭ সালে ‘দি বেঙ্গলী একাডেমী অ্যাক্ট’ গৃহীত হলে সরকারি অর্থে পরিচালিত একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করে। 

বর্তমানে বাংলা একাডেমী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলা একাডেমির কার্যনির্বাহী প্রধান হিসেবে রয়েছেন একজন মহাপরিচালক। 

প্রথম মহাপরিচালক ছিলেন মযহারুল ইসলাম। বর্তমান মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কবি ও কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ নূরুল হুদা। বাংলা একাডেমির বর্তমান সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। 

বাংলা একাডেমীর কার্যক্রম ফ্রেঞ্চ একাডেমীর আদলে পরিচালিত হয়। কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য এখানে রয়েছে বেশ কিছু বিভাগ। বিভাগগুলির মধ্যে রয়েছে গ্রন্থাগার প্রকাশনা, গবেষণা, অনুবাদ, সংকলন।

বাংলা একাডেমীর গৃহীত কর্মসূচির পরিধি ব্যাপক।

    • কর্মসূচি গুলো হলো,

প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় পুঁথি সংগ্রহ, গবেষণা ও সম্পাদনা; আধুনিক বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণা। 

লোকসঙ্গীত, লোককাহিনী ও ছড়া আহরণ ও গবেষণা করা; আঞ্চলিক ভাষার অভিধান। 

ব্যবহারিক বাংলা ভাষার অভিধান, আদিবাসী-বাংলা ভাষার অভিধান, বাংলা-অন্যান্য ভাষার অভিধান সংকলন, অন্যান্য ভাষার প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্য।‌

ইতিহাস, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, অর্থনীতি, দর্শন, সমাজনীতি, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ক গ্রন্থের অনুবাদ

এছাড়াও রয়েছে বাংলার শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ গুলি অন্যান্য ভাষায় রূপান্তরকরণ, বাংলায় উচ্চতর শিক্ষার পাঠ্য ও সহায়ক গ্রন্থ প্রকাশ এমনকি বাংলায় ইসলামি গ্রন্থ, বিশ্বকোষ, সাহিত্যকোষ, জীবনীকোষ সংকলন ও বাংলা সাহিত্যের কীর্তিমান লেখকদের পুরস্কৃতকরণ ইত্যাদি।

স্বাধীনতার পর থেকে একাডেমি চত্বরে স্বল্প পরিসরে বইমেলা শুরু হয় এবং ১৯৭৪ সাল থেকে বড় আকার ধারণ করে।

প্রতি বছর পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বাংলা একাডেমি একটি জাতীয় বই মেলার আয়োজন করে যা অমর একুশে গ্রন্থমেলা নামে আখ্যায়িত হয়।

১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখ বাংলা ভাষার জন্য আত্মোৎসর্গের যে করুণ ঘটনা ঘটে, সেই স্মৃতিকে অম্লান রাখতেই এই মাসে আয়োজিত এই বইমেলার নামকরণ করা হয় “অমর একুশে গ্রন্থমেলা“।

১৯৮৪ সাল থেকে বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলাকে অমর একুশে গ্রন্থমেলা নামকরণ করা হয়।

শিল্পচর্চায় অনন্য অবদানের জন্য ২০১০ সালে বাংলাদেশের “সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার” হিসাবে পরিচিত “স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয় এই প্রতিষ্ঠানটিকে। তাছাড়াও বাংলা একাডেমিকে আনন্দ পুরস্কার দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলা একাডেমি তা প্রত‍্যাখ‍্যান করে।

বাংলা একাডেমি নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের গুণী, পণ্ডিত ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি বছর সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে।

এছাড়া বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তগণও ফেলো হিসেবে গণ্য হন। বাংলা একাডেমির সাধারণ পরিষদের বার্ষিক সভায় সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করা হয়।

সম্মানসূচক ফেলোশিপপ্রাপ্তদের সম্মাননাপত্র ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অমর্ত্য সেনকেও এই সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করা হয়।

দেশজ সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সমকালীন শিল্প ও সাহিত্য সংরক্ষণ এবং গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে জাতির মানসিক বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধন করেছে বাংলা একাডেমি। এধারা সবসময় অব্যাহত থাকুক, সে কামনাই করব।

এরকম আরো ব্লগ পড়তে এখানে, ক্লিক করুন।

লেখক

খায়রুল ইসলাম শুভ

ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট 

YSSE