“লাগ ভেল্কি লাগ
লাগ ভেল্কি লাগ
আয়নাবাজির ভেল্কি লাগ”।
আয়না জিনিস টা কেমন অদ্ভুত না? দেখে মনে হয় যা দেখছি সব সত্যি কিন্তু তা নয়। আয়নায় আমরা বাস্তব এর উল্টোটা দেখি যাকে আমরা বাস্তব হিসেবে ধরে নেই। যাকে বলে চোখের ধোঁকা। এই চোখের ধোঁকা দিয়ে আয়না খেলে যায় তার খেলা। নিজের অজান্তেই আমরা হয়ে পড়ি সেই খেলার অংশ কখনো বা খেলার গুটি হিসেবে কখনো আবার খেলার পুতুল। আয়নার খেলায় কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা ধরার সাধ্য কারও নেই। এ যেন এক অন্য জগত। যেখানে আয়নাই সত্যি। আয়নার জগত ই আসল জগত।
শারাফাত করিম আয়না (চঞ্চল চৌধুরী)। আর বাকি পাঁচটা মানুষের মত একজন সাধারণ মানুষ যিনি একজন অভিনেতা। সবার অভিনয় এর একটি বিশেষত্ব আছে যা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে। আয়নার ও আছে নিজের অভিনয় এর আলাদা বৈশিষ্ট্য যা তাকে অন্যদের থেকে করে তোলে আলাদা। আয়নার অভিনই এর একটা জগত আছে যখন যেই চরিত্র তখন সেই জগত। নতুন চরিত্রের সাথে সাথে নতুন একজন মানুষ তখন আয়না হয়ে যায় বিলীন। চরিত্রই তখন বাস্তবতা।
অভিনেতার অভিনয় এর জন্য দরকার মঞ্চ তবে আয়নার অভিনয় এর মঞ্চ পৃথিবী। যে অভিনয় করে বাস্তব জীবনে তার মঞ্চের দরকার পরেনা। পৃথিবীর কাছে আয়না একজন বাবুর্চি যে জাহাজ করে ভিন্ন ভিন্ন সাগরে ঘুরে বেরায়। বাস্তব জীবনে সে আসল মানুষের রূপ ধারণ করে হয়ে যায় সেই মানুষ। তাদের পাপের সাজা হিসেবে কারাবন্দী সময় কাটায়। “চারপাশ বদলে, সময় থেমে যায়, মিথ্যা যখন সত্যি হয়। সবার জন্য সব সত্যি আর আমার জন্য অভিনয়”। সময় যায়, আয়না নতুন নতুন রূপ ধারণ করে তবে জীবন সব সময়ই এক ভাবে চলে না, জীবনে আসে নতুন মানুষ যে হয়ে উঠে জীবনের অংশ। আয়নাও চায় নিজের জীবনে পরিবর্তন আন্তে হয়ে উঠতে আসল আয়না। কিন্তু তখন ই মুখোমুখি হতে হয় কর্মের ফল এর সাথে যা টেনে এনে দাড় করে দেয় এমন জীবন চক্রে যেখান থেকে বের হওয়া অসাধ্য।
“আয়নাবাজি” চলচ্চিত্রটি বাংলা সিনেমা জগতের একটি gem। এটিকে বাংলা চলচিত্র জগতের The Shawshank Redemption বলা যায়। ভিন্নধর্মী এই চলচিত্র শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দর্শকের মনে সাসপেন্স সৃষ্টি করেই যাবে। দৃশ্যপট চলার পাশাপাশি প্রেমের এক মধুর স্রোত চলচ্চিত্রটিকে আরও দারুণ করে তুলেছে। এই চলচ্চিত্রের চমৎকার এবং অপ্রত্যাশিত সমাপ্তি সারাজীবন এক অসাধারণ চলচ্চিত্র হিসেবে দর্শকের অন্তরে গেঁথে থাকার জন্য যথেষ্ট।
“আয়নাবাজি” চলচ্চিত্রের মূল অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ওরফে আয়না। সহঅভিনেত্রী মাসুমা রাহমান নাবিলা। এই চলচ্চিত্রে অসাধারণ চরিত্র পালন করেছেন পার্থ বারুয়া।
এছাড়াও ছিলেন গউসুল এলাম, লুতফুর রাহমান এবং প্রমুখ অভিনেতা। পরিচালনা করেছেন আমিতাব রেজা।
এই চলচ্চিত্রের দৃশ্যপট থেকে চোখ সরিয়ে অন্য দিকে যদি দৃষ্টিপাত করি তাহলে দেখা যায় এর অসাধারণ কাহিনীর সাথে আছে কিছু চমৎকার গান। শুরুতেই যদি “পাপ জমাই” গানটা শুনি তাহলেই দেখা যায় পাপের দুনিইয়ার আসল বাস্তবতা। গানটা গেয়েছেন চিরকুট ব্যান্ড। শারমিন সুলতানা এর কণ্ঠের এই গান দর্শকের মনে জায়গা বাঁধতে বাধ্য। অনেক সাসপেন্স এর মাঝে প্রেমের ছোঁয়া লাগিয়া দিয়ে গেয়েছে হাবিব এর “ধীরে ধীরে যাওনা সময়” গানটি। এ যেন অনেক ধাঁধার মধ্যে একটু স্নিগ্ধতা।
“আয়নাবাজি” চলচিত্রের মাধ্যমে চঞ্চল চৌধুরী আবারও প্রমাণ করে দিয়েছেন নিজের অভিনয় যোগ্যতা। যারা এখনো মনে করেন যে বাংলা সিনেমা দেখার যোগ্য নয় তাদের জন্য এটি একটা উচিত জবাব। ভাল কাহিন, প্রমিসিং plot এবং ভাল পরিচালক পেলে আমরা ও বহির্বিশ্ব থেকে কোন অংশে কম নয় শুধু চায় জনগণের সমর্থন। আর এক আয়নাবাজি এর খেলা দিয়েই ভাল চলচ্চিত্রের সমাপ্তি নয়, এটা শুধু শুরু মাত্র। বেশিদিন নেই যখন বাংলা সিনেমা ও Oscar এর মত পুরস্কারের মালিক হবে।
Writer,
Samiha Jahan
Intern of Content Writing Department,
YSSE