পৃথিবীর প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা তৈরি করতে গেলে আমাদের চোখে ভেসে উঠবে অক্সফোর্ড কিংবা কেমব্রিজের নাম। তবে এই দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনোটিই পৃথিবীর প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, এমনকি পশ্চিমা দেশের নামি-দামি যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বর্তমানে সাফল্যের চূড়ায় অবস্থান করছে। কারণ প্রাচীনকালে এসব বিশ্ববিদ্যালয় তৈরীর চিন্তাভাবনাও কারো হয়নি। বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়টি অবস্থান করছে মরক্কোর বুকে, যেখানে আজও জ্ঞানচর্চা অব্যাহত আছে। লিখছি পৃথিবীর সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, আল-কারাউইন নিয়ে।
৮৫৯ সালে মরক্কোর ফেজ শহরে প্রতিষ্ঠা হয় আল-কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের যেটি বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ইউনেস্কো হতে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই এখানে ডিগ্রি প্রদানের ব্যবস্থা ছিল। পড়ানো হতো প্রাকৃতিক বিজ্ঞান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভাষা ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের মতো বিষয়। বিশ্বের প্রথম এবং প্রাচীনতম এই বিশ্ববিদ্যালয় মুসলিম ইতিহাসের আধ্যাত্মিক এবং শিক্ষার অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন ফাতিমা আল-ফিহরিয়া নামের একজন ধনাঢ্য মুসলিম মহিলা। তিউনিশিয়ার কারাউইন শহরে জন্ম নেওয়া ফাতিমা শৈশবেই পরিবারের সঙ্গে চলে আসেন মরক্কোর ফেজ শহরে। সেখানেই ফাতিমার পিতা বিন আবদুল্লাহ ব্যবসায় সফলতা লাভ করে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন।
পিতার মৃত্যুর পর ফাতিমা ও তার বোন মারিয়াম সকল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন। ফাতিমা সেই সম্পত্তি আল-কারাউইন মসজিদের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করতে থাকেন। কিন্তু তার পাশাপাশি তাঁর মনে হয়, মানুষের উন্নতির জন্য সর্বপ্রথম দরকার শিক্ষা। এরপর আল-কারাউইন মসজিদের তত্ত্বাবধানেই ফাতিমার অর্থানুকুল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা শুরু হয়।
মুসলিমদের সাথে সাথে অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের জন্যেও এই বিশ্ববিদ্যালয় মধ্যযুগে জ্ঞানচর্চার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। আবুল আব্বাস, মোহাম্মদ ফাসির মতো চিন্তাবিদ এই বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষালাভ করেছিলেন। ঐতিহাসিক ইবন খালদুন, জ্যোতির্বিদ আল বিত্রুজির নাম জড়িয়ে আছে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এখান থেকেই শিক্ষালাভ করেন আরবী সংখ্যার আবিষ্কারক পোপ দ্বিতীয় সিলভেস্টার। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন একটি গ্রন্থাগার অবস্থিত যেটির সংগ্রহে রয়েছে ৪০০টিরও বেশি দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি
মরক্কোর সরকার কর্তৃক ১৯৬৩ সালে আল-কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয় সেই দেশের আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় পদ্ধতির অংশ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয়। তবে ইউনিভার্সিটি অফ আল-কায়রাওয়ান এখন তার জৌলুস হারিয়েছে। আজ বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বললে, এই প্রাচীন প্রতিষ্ঠানটির নাম অনুচ্চারিতই থেকে যাবে। এই বিশ্ববিদ্যালয় মধ্যযুগের মুসলমান ও ইউরোপীয়দের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাবিষয়ক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখেছে।
To Read More Blogs, Click this link
Muhammad Mahadi Hasan
Intern
Content Writing Department
YSSE