মুভি: পথের পাঁচালী
পরিচালক : সত্যজিৎ রায়
রচয়িতা: বিভুতিভূষন বন্দোপাধ্যায়
চিত্রনাট্যকার: সত্যজিৎ রায়
মুক্তি: ২৬ আগস্ট ১৯৫৫ (ভারত)
ভাষা: বাংলা।
রিভিউ: বিভূতিভূষন বন্দোপাধ্যায় এর উপন্যাস “পথের পাঁচালী” প্রকাশিত হয় ১৯২৯ সালে। ১৯৪৩ সালে সত্যজিৎ রায়ের সাথে এই উপন্যাস টির পরিচয় ঘটে।
উপন্যাসটির কিশোর সংস্করণ “আম আটির ভেঁপু” এর অলংকরণ এর সময় সত্যজিৎ রায় এর উপন্যাসটির সাথে শখ্যতা বাড়ে। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যদি তিনি কোনো সিনেমা বানান পথের পাঁচালী ই হবে তার প্রথম সিনেমা।
সত্যজিৎ রায় এই হিসেবে সার্থক। তিনি যদি অন্য কোনো সিনেমা না ও বানাতেন শুধু এই সিনেমার জন্যই তিনি অমর হতেন।
সিনেমাটিতে অপু ও দূর্গা দুই ভাইবোনের গল্প ফুটে উঠেছে। বোন দূর্গা যেমন দুরন্ত, ভাই অপু তেমন শান্ত। তারা দরিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠে। বাবা হরিহর রায় একজন সহজ সরল মানুষ। যিনি একজন পুরোহিত।
আর মা সর্বজয়া। কখনো অপু দূর্গাকে শাসন করেন আবার কখনো স্নেহে কাছে টেনে নেন। সিনেমাটির আরো একটি চরিত্র ইন্দিরা ঠাকুরুন। অপু দূর্গার দূর–সম্পর্কের এক পিসি, যিনি তাদের বাড়িতেই থাকেন। সর্বজয়া ইন্দিরা ঠাকুরুন কে তেমন পছন্দ করেন না। কারণ তাদের দারিদ্র পীরিত সংসারে তিনি একধরণের বোঝার মত। ইন্দিরা ঠাকুরুন এর সাথে সর্বজয়ার প্রায়ই কথা কাটাকাটি হয়। ইন্দিরা ঠাকুরুন একেকবার বাড়ি ছেড়ে চলেও যান। আবার ফিরেও আসেন।
দূর্গা খুব পিসি ভক্ত। সে তার ধনী প্রতিবেশীদের গাছ থেকে ফলমূল চুরি করে ইন্দিরা ঠাকুরুন এর সাথে ভাগ করে খায়। সর্বজয়া এইটা পছন্দ করেন না। কারণ তার মতে ইন্দিরা ঠাকুরুন দূর্গাকে চুরি করা শিখাচ্ছে।
একবার দূর্গার নামে পু্ঁতির মালা চুরির অভিযোগ আনে প্রতিবেশী রা। মা হিসেবে সর্বজয়া কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সেইদিন সর্বজয়া দূর্গাকে খুব মারপিট করে।অপু দূর্গার মিষ্টিওয়ালার কাছ থেকে মিষ্টি খেতে চায়। কিন্তু অভাবের সংসারে তাদের আশা পূর্ণ হয়না। তারা চড়ুইভাতি খেলে, বায়োস্কোপ দেখে।
বাছুর হারিয়ে যাওয়ায় সর্বজয়া অপু, দূর্গাকে বাছুর খুঁজতে পাঠায়। অইদিন তারা খুঁজতে খুঁজতে এক অন্য এলাকায় চলে আসে। ক্ষেতে ছুটাছুটি করে। অবশেষে ট্রেন দেখতে পায়। অপু, দুর্গা ট্রেন দেখতে গিয়ে ক্ষেতে ছুটাছুটি করার দৃশ্যটি সিনেমাটির একটি আইকনিক দৃশ্য। বাছুর নিয়ে ফেরার পথে তারা দেখতে পায় ইন্দিরা ঠাকুরুন মরে পথের ধারে পরে আছে।
হরিহর বাড়ি মেরামতের টাকা যোগাতে কাজের সন্ধ্যানে অন্য এলাকায় যায়। সেই সময় সর্বজয়া খুব অর্থসংকটে পড়ে। অনেক কষ্টে সংসার চালাতে হয়। ঘর আরো ভেঙে যায়। সেইসময় দূর্গার খুব জ্বর হয়। অপুকে সে বলে সে সুস্থ হলে আবার ট্রেন দেখতে যাবে। সেই রাতে প্রচুর ঝড় হয়। দূর্গার জ্বর ও বাড়তে থাকে। তাদের ঘর ভেঙে যায়। ঘরে পানি প্রবেশ করতে থাকে। একসময় দূর্গার অবস্থা খুব খারাপ হয়৷ সর্বজয়া অপুকে পাঠায় প্রতিবেশীকে ডেকে আনতে। কিন্তু এসে দেখে দূর্গা আর পৃথিবীতে নেই!!
তারপর একসময় হরিহরও ফিরে আসে। সে কি কি নিয়ে এসেছে সবার জন্য তা দেখাতে থাকে। সর্বজয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। একসময় ডুকরে কেঁদে উঠে বলে যে দুর্গা আর নেই! হরিহর ও কেঁদে উঠে!
হরিহর সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার নিয়ে কাজের সন্ধ্যানে শহরে চলে যাবে। শহরে যাওয়ার জন্য গোছগাছ করতে গিয়ে অপু সেই পু্ঁতির মালাটি খু্ঁজে। সে সেটা লুকিয়ে ডোবার মাঝে ছুড়ে ফেলে যাতে দিদির দোষ কখনো প্রকাশ না পায়।
শেষ দৃশ্যে দেখা যায় হরিহর, সর্বজয়া, অপু গরুর গাড়ি চরে শহরে চলে যাচ্ছে!! এই খানেই সিনেমাটির সমাপ্তি ঘটে। সিনেমাটিতে গ্রামীণ শিশুদের চিরায়ত শৈশব ফুটে উঠেছে। সিনেমাটি বিশ্বের অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ সিনেমা যা সত্যজিৎ রায় এর এক অমর কীর্তি।
writer:-
নিশাত জাহান হক
Intern, Content Writing Department
YSSE