হিজরি সপ্তম শতাব্দী। মোঙ্গলীয়দের আক্রমণে লণ্ডভণ্ড আব্বাসীয় সালতানাত। কনস্টান্টিনোপলের খ্রিষ্টানদের সাথে লড়াইয়ে রোমের সালজুক সালতানাতের প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রায়। ইসলামি ইতিহাসের এক চরম দুর্যোগপূর্ণ সময়। ঠিক এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে মেঘের আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে হেসে ওঠে এক নবারুণ সূর্য। দিগ-দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ে সেই সূর্যের দীপ্তি। ইসলামি সাম্রাজ্যের মেঘলা আকাশকে স্বচ্ছ এবং প্রখর রোদের আকাশে পরিণত করা সেই সূর্যের নাম ‘উসমানি সালতানাত। ইসলামি ইতিহাসের এক সোনালি অধ্যায় জুড়ে ছড়িয়ে যে সালতানাতের ব্যাপ্তি। যারা শতাব্দীর পর শতাব্দী দোর্দণ্ড প্রতাপের এবং ন্যায়নিষ্ঠার সাথে শাসন করে গেছেন মুসলিম বিশ্ব। একের পর এক রাজ্য বিজয় করে ইসলামকে করেছেন সমুন্নত এবং সম্প্রসারিত। সারা বিশ্ব যাদেরকে জানে ‘অটোমান সাম্রাজ্য’ নামে। দীর্ঘকাল যাদের কথা চর্চা হয়ে আসছে ইতিহাসের পাতায় পাতায়।

 

এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশ জুড়ে বিস্তৃত ছিলো বিশাল অটোমান বা ওসমানীয় সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ্যের সীমানা ছিলো উত্তর আফ্রিকার তিউনিসিয়া থেকে ইউরোপের হাঙ্গেরী, রাশিয়ার ক্রিমিয়া থেকে পূর্বে জর্জিয়া এবং আরবের ইয়েমেন পর্যন্ত বিস্তৃত। এই বিশাল সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব ছিলো দীর্ঘ ৬শ বছর।

 

অটোমান সাম্রাজ্য ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে বেশী দিন টিকে থাকা সাম্রাজ্য। ইউরোপ থেকে শুরু করে এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল অটোমান সাম্রাজ্য। কিন্তু এত বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা লাভ করল কিভাবে? অটোমান সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন শুরু তুরস্কের আনাতোলিয়া থেকে। অটোমান বা উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম উসমানের বাবা আর্তুগ্রুল গাজী ই মূলত অটোমান সাম্রাজ্যের ভিত্তিপ্রস্তর করে যান। আর্তুগ্রুল গাজী ছিলেন মঙ্গোলিয়ান বংশোদ্ভূত এক যোদ্ধা। তিনি এশিয়া মাইনর দিয়ে আনাতোলিয়া তে আসেন। তিনি যখন আনাতোলিয়া তে আসেন তখন এই অঞ্চলে বিভক্ত ছিল, এক অংশ দীর্ঘদিন যাবত বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। অপর অংশে আধুনিক তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো নিয়ে সেলজুক সাম্রাজ্য ছিল। সেলজুক সাম্রাজ্যের তুর্কমান বা তুর্কি বংশোদ্ভূত সুলতান আলাউদ্দিন কে আর্তুগ্রুল এক যুদ্ধে সাহায্য করার জন্য পুরস্কার হিসেবে তার সাম্রাজ্যের একটি অংশের শাসনকর্তা বানিয়ে দেন। আর্তুগ্রুল গাজীর মৃত্যুর পর এবং সেলজুক সাম্রাজ্য দিন দিন দুর্বল হয়ে ভেঙে যাওয়ার কারণে আনাতোলিয়া বিভিন্ন অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে আর্তুগ্রুল গাজীর ছেলে প্রথম উসমান তার শাসনাধীন অঞ্চল কে বৃদ্ধি করে ১২৯৯ সালে নিজেকে সুলতান হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি ই ছিলেন অটোমান সাম্রাজ্যের প্রথম সুলতান। এরপর তার ছেলে ওরহান এবং সুলতান প্রথম মুরাদ সাম্রাজ্যের আরও বিস্তৃতি ঘটান। সুলতান প্রথম মুরাদ উসমানীয় রাজ্য থেকে উসমানীয় বা অটোমান সাম্রাজ্যে পরিণত করেন।উসমানীয় সাম্রাজ্যে পার্শ্ববর্তী খ্রিস্টান বাইজেন্টাইন শাসকদের মধ্যে বেশ কয়েকবার ছোট ছোট যুদ্ধ হয়। অবশেষে ১৪৫৩ সালের ২৯ মে অটোমান সাম্রাজ্যের  সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদ বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল বা ইস্তাম্বুল কে জয় করেন। সাম্রাজ্যের শক্তিশালী ভীত মূলত কনস্টান্টিনোপল জয় করার পর  গড়ে ওঠে।

পনের শতাব্দীতে সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তিতে অটোমানরা ছিল জগতের শ্রেষ্ঠ সাম্রাজ্য। এশিয়া ছাড়াও সুদূর দক্ষিণপূর্ব ইউরোপেও প্রাধান্য ছিল অটোমান সুলতানদের। একটা সময় পূর্ব ও উত্তর আফ্রিকাও তাদের দখলে চলে যায়। ইতিহাস বিখ্যাত দানিয়ুব নদীর তীরবর্তী অঞ্চল থেকে শুরু করে নীল নদ অবধি প্রসারিত অটোমান সাম্রাজ্যের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী, লাভজনক অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিখ্যাত সব স্থাপনা এবং জ্যোতির্বিদ্যার সুদূরপ্রসারী উন্নতি বিশ্বের অন্যসব সম্রাটের ঈর্ষার কারণ ছিল।

এত এত সফলতার পরও বিশাল এই সাম্রাজ্যের পতন দেখেছিল গোটা বিশ্ব। ইতিহাসবিদরা লিখেছেন, ষোল শতক থেকেই অটোমান সাম্রাজ্যের জৌলুশ কমতে শুরু করে।

তারা ১৬৮৩ সালে দ্বিতীয় দফা ভিয়েনা দখল করতে গিয়ে পরাজিত হলে সাম্রাজ্যের ক্ষমতার পতন শুরু হয়।

এছাড়া আঠারো শতকে প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া এবং হ্যাপসবার্গ সাম্রাজ্যের তুলনায় তাদের সামরিক শক্তি কমে যায়। আর সেটার সমাপ্তি করে দেয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর ১৯২২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে পতন ঘটে অটোমানদের। 

 

To Read More, click Here .

 

Written by 

Dohal Islam

Intern, content writing department 

YSSE