তথ্য-প্রযুক্তির যুগে সাইবার শব্দটির সঙ্গে আমরা সকলেই পরিচিত। যার অর্থ অনলাইন জগৎ। এটি সম্পূর্ণ আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরের একটি দুনিয়া। মূলত, অনলাইন নেটওয়ার্ক নির্ভর যাবতীয় কর্মকান্ড এর অন্তর্ভুক্ত। 

 

একবিংশ শতাব্দীতে তথ্য- প্রযুক্তির কল্যাণে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমাগত বাড়ছে  সকল শ্রেণি – পেশার মানুষের অবাধ বিচরণ। একদিকে এর রয়েছে অসংখ্য ইতিবাচক ভূমিকা অন্যদিকে অন্ধকার দিক। সময়ের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধের সংখ্যা। তেমনি এক সাইবার অপরাধ হচ্ছে  বুলিং। সাম্প্রতিক কালে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে সাইবার হামলার ৫০ দশমিক ২৭ শতাংশই সাইবার বুলিং। 

 

চলুন তবে জেনে নেয়া যাক সাইবার বুলিং সম্পর্কে।

  সাইবার বুলিং ঃ  সাইবার বুলিং এক জঘন্যতম ভারচুয়াল অপরাধ। এর আভিধানিক অর্থ কাউকে অপ্রত্যাশিত আক্রমণ এবং সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা। অর্থাৎ ডিজিটাল মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষকে উদ্দেশ্যপ্রণীত ভাবে হেনস্তা করা, সম্মানহানি করা বা অহেতুক হয়রানি করাই সাইবার বুলিং। 

 

এখন আসা যাক  বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে কোন কোন বিষয় গুলোকে বুলিং হিসেবে ধরে নেয়া হয় সে প্রসঙ্গে –

আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুলিং এর শিকার হচ্ছি। কিন্তু লোকলজ্জা ও ব্যক্তিগত সম্মানহানির ভয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হতে চাই না। এ যাবত কালে সংগঠিত নানা প্রকার সাইবার বুলিং এর মধ্যে ট্রলিং করা, ছবি বিকৃত করা, ব্যক্তিগত অনুমতি ছাড়া ছবি পোস্ট করা, অশ্লীল বার্তা পাঠানো, মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্য, ছবি,ভিডিও শেয়ার করা, কারো পোস্টে বাজে মন্তব্য করা, অশ্লীল ভাষায় প্রয়োগ, আপত্তিকর ছবি, ভিডিও ধারণ ও শেয়ার করা,পর্ণগ্রাফি, যৌন হয়রানি ইত্যাদি অন্যতম। 

 

এবার আলোচনায় আসি সাধারণত কারা বেশি সাইবার বুলিং এর শিকার। 

   বর্তমানে একদিকে তথ্য প্রযুক্তির সহজলভ্যতা অন্যদিকে এর সঠিক ব্যবহার না জানার কারনে যেকোন বয়সের যেকোনো শ্রেণি – পেশার মানুষই সাইবার বুলিং এর শিকার হতে পারে।

 

 তবে এক্ষেত্রে নারী ও শিশুরা রয়েছে উচ্চ ঝুঁকিতে। সাধারণত নারীরা দৈহিক বর্ণ,শারীরিক গঠন, ধর্ম, পেশা ইত্যাদি কারনে ব্যাপকভাবে হয়রানির শিকার। এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে শতকরা প্রায় ৫২ ভাগ অভিযোগই আসে নারীদের কাছ থেকে এবং বাংলাদেশে শতকরা ৭৬ শতাংশ নারী বিভিন্ন সময় অনলাইনে বুলিং এর শিকার। বয়স বিচারে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী নারীরা আক্রান্ত হয় বেশি। ভুক্তভোগীদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা  ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ অপরদিকে পুরুষের সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়, ৪৩ দশমিক ২২ শতাংশ। 

 

এছাড়াও, এ কাতারে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব,সরকারী ও বেসরকারী কর্মকর্তা, মডেল, সেলিব্রিটি, খেলোয়াড়েরাও রয়েছেন যারা কোন না কোন ভাবে অনবরত বুলিং এর শিকার হচ্ছেন। 

 

এখন আসা যাক সাইবার বুলিং এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ঃ

 

   বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাইবার বুলিং একটি বহুল সংগঠিত অপরাধ। এর প্রভাব এতোটাই মারাত্মক যে কোন ব্যক্তিকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে সামাজিক ভাবে হেয়পতিপন্ন করে এবং চরম পর্যায়ে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে।

 

এছাড়াও ক্রমাগতই বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যাদের কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায়  মারাত্মকভাবে বুলিং এর শিকার। এরা একদিকে যেমন বুঝে উঠতে পারে না কিভাবে পরিস্থিতি  মোকাবেলা করা যায় অন্য দিকে পারিবারিক ও সামাজিক চাপে নিজেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রাখে। 

 

সাইবার বুলিং অর্থনৈতিকভাবেও ভুক্তভোগী ও তার পরিবারকে কোনঠাসা করে রাখে। আজকাল প্রায়ই দেখা যায় আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে পরবর্তীতে ব্লেকমেইল করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিতে ।

 

তাছাড়া, অনেক  রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা তথ্য, গুজব ও অপপ্রচার চালানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, হানাহানির ঘটনা অহরহ ঘটছে।

 

চলুন তবে সাইবার বুলিং কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় এ বিষয়ে আলোচনা করা যাক। 

   ★ সাইবার বুলিং প্রতিরোধে ব্যক্তিগত ও সামাজিক  সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ। নিজে সচেতন হই অন্যকে সচেতন হতে সহায়তা করি। 

 

★ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও যত্রতত্র শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। 

 

★প্রাথমিকভাবে বুলিং এর শিকার হলে পাল্টা জবাব না দেয়া। যথাসম্ভব ক্ষতিকর একাউন্ট ব্লক করে দেয়া। 

 

★ ক্রমাগত বুলিং এর শিকার হলে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে ৯৯৯ নাম্বারে কল দিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেয়া। তাছাড়া দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়। 

 

★ আক্রান্ত হলে বিষয়টি নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে পরিবার ও আপনজনের সাথে আলোচনা করা। 

 

★ ফেসবুকে ফেক একাউন্টে বন্ধুত্ব স্থাপন থেকে দূরে থাকা।

 

★ আতংকিত না হয়ে বুলিং মোকাবেলায় চেষ্টা করা।

 

★ পিতামাতার সন্তানের অনলাইন কর্মকান্ডের উপর নজর দেয়া। 

 

★ সাইবার বুলিং প্রতিরোধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জোরদার করা। 

 

পরিশেষে বলা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের জন্য সাইবার বুলিং ক্রমশ হুমকি হয়ে উঠছে। এজন্য সামাজিক সচেতনতা যেমন প্রয়োজন তেমনি অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। 

আরও ব্লগ পরতে এখানে #ক্লিক করুন।

Writer 

Baitul Hikma 

Intern, Content writing Department 

YSSE.