আধুনিক যুগে তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবী আজ হাতের মুঠোয়। মুহূর্তের মধ্যেই বিশ্বের অন্য প্রান্তে কি ঘটছে না ঘটছে জেনে যাচ্ছি ইন্টারনেটের বদৌলতে। জ্ঞান,বিজ্ঞান, শিক্ষা, চিকিৎসার পাশাপাশি চরম প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে কেইবা চায় পিছিয়ে থাকতে। এজন্য যোগ্যতার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই। দৈনন্দিন ব্যস্ততা,কাজের চাপ ও সময় সল্পতার কারণে ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও স্কিল ডেভলপমেন্ট সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাছাড়া রয়েছে বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠানের অভাব। এক্ষেত্রে শতভাগ অনলাইন প্লাটফর্ম “Coursera “ হতে পারে সেরা অপশন। আর সেই সঙ্গে তা যদি হয় বিশ্বের তাবর তাবর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কোর্স তাহলে তো কথাই নেই। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি কিভাবে “Coursera “ এর মাধ্যমে বিশ্বের প্রথম সারির ইউনিভার্সিটির অনলাইন কোর্সগুলোতে নিজেকে সম্পৃক্ত করবেন,নতুন নতুন ডিগ্রি অর্জন করবেন তা নিয়ে আজকের আলোচনা।
শুরুতে আলোচনা করা যাক কোর্সেরা সম্পর্কে।
“Coursera” একটি জনপ্রিয় অনলাইন লার্নিং প্লাটফর্ম। এটিকে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত ওয়েবসাইটও বলা যায় এজন্য যে, এতে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের,যে কোনো মানুষের,যে কোনো সময়ে জ্ঞান অর্জনে রয়েছে অবাধ সুযোগ।
প্রতিষ্ঠানের যাত্রা ঃ
২০১২ সালে, Stanford University এর কম্পিউটার সাইন্সের প্রফেসর Dophen koller এবং Andrew NG হাত ধরে পথ চলা শুরু। মূলত শিক্ষার মাধ্যমে জীবন পরিবর্তন করার লক্ষ্য নিয়েই এর যাত্রা। আজও পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষের মাঝে বিশ্বমানের শিক্ষা পৌঁছে দিতে এটি বদ্ধ পরিকর।
Coursera কেন সেরা ঃ
সম্পূর্ণ বীনা মূল্যের কোর্স ও ডিগ্রি সম্পন্ন করতে এটি একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান। কেননা Coursera তে রয়েছে বিশ্বের নামকরা ২৭৫টিও বেশি ইউনিভার্সিটি ও কোম্পানি,রয়েছে ১১৩ মিলিয়নের উপরে সক্রিয় শিক্ষার্থী নিয়ে ৪০০০ কোর্স। একই সাথে বিশাল নেটওয়ার্ক, পাবলিক ক্যাম্পাস, অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকগণ যারা নিয়মিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স পরিচালনা করেন। এছাড়া, বিশ্বমানের পাঠ্যক্রম, স্টাডি ম্যাটারিয়াল, সাশ্রয়ীমূল্য তো আছেই সেই সাথে পছন্দসই সময়সূচি আপনাকে দিবে বাড়তি সুবিধা। মোবাইল বা ডেস্কটপের মাধ্যমে খুব সহজেই করে ফেলতে পারবেন কাঙ্খিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স।
সুযোগ- সুবিধা কেমন ঃ
দারুণ সব সুযোগ সুবিধা দিয়ে সাজানো Coursera তে রয়েছে কোর্স চলাকালীন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময়ের সুযোগ। অধিকাংশ কোর্সের মেয়াদ ১ থেকে ৩ মাস, ঊর্ধ্বে ৬ মাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে তা নির্ভর করবে আপনি দৈনিক কত ঘন্টা এর পেছনে ব্যয় করবেন তার উপর। একাডেমিক নন-একাডেমিক, সফটস্কিল,হার্ডস্কিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেজর ও মাইনর সাবজেক্ট, ইন্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা, প্রজেক্ট ডেভলপমেন্ট, ব্যবসা, সামাজিক বিজ্ঞান, সাহিত্য,সংস্কৃতি,কলা সহ হেন কোন বিষয় নেই যে শিখতে পারবেন না। রয়েছে বিদেশি ভাষা শেখার সুবর্ণ সুযোগ।
আর এখানেই শেষ না! Google, IBM, Meta, Microsoft এর মতো বড় বড় টেক জায়ান্ট তাদের বিভিন্ন কোর্স যেমনঃ Data analytics, IT support, Digital marketing, UX design, project management, Machine learning, Data science, Artificial intelligence ইত্যাদি অসংখ্য বিষয় নিয়ে কাজ করছে। গুগলের মতে,এই লার্নিং প্লাটফর্মে তারা যেসব কোর্সসমূহ পরিচালনা করে থাকে তা অন্যান্য ৪ বছরের ডিগ্রীর সমমূল্য ধরা হয়। তাছাড়া, ১,০০,০০০ বেশি স্কলারশিপের সুযোগ সুবিধা নিয়ে ইতিমধ্যে সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সারা ফেলেছে এই মাধ্যমটি।
এবার আসা যাক এনরোল হবেন যেভাবেঃ
প্রথমত গুগলে Coursera লিখে সার্চ দিন আর ঘুরে আসুন কোর্সেরা’র হোমপেজে। এবার সেখানে আপনার বিষয় সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন শতশত বিশ্ববিদ্যালয়ের মহা মূল্যবান সকল কোর্স। পছন্দ মাফিক বিষয় বাছাই করে খুলে ফেলুন নিজের প্রোফাইল। তবে দেখে নিতে ভুলবেন না কোর্সের সময়সূচি, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রফেসর,স্টাডি ম্যাটারিয়াল,রিভিউ, স্টুডেন্ট এঙ্গেজমেন্ট ইত্যাদি।
আরও একটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন কোর্সটি পেইড বা নন-পেইড কিনা। যদিও অধিকাংশ কোর্স বিনামূল্যে করা যায় তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী কিছু কিছু বিষয়ে $9 থেকে $49 পর্যন্ত পে করতে হতে পারে । এখানে মূলত কোর্স শেষে সার্টিফিকেট নিতে চাইলে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ দিতে হবে। তবে হতাশ হবার কিছু নেই। এখানেও আছে যথেষ্ট সুবিধা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পেইড কোর্সগুলোতে Financial Aid কথাটি লিখা থাকে। এর মানে যদি আপনি সার্টিফিকেট নিতে চান কিন্তু এই পরিমাণ অর্থ দিতে অক্ষম তাহলে Financial Aid ফর্মটি যথাযথ ভাবে পূরণ করতে পারবেন। ৮/১০ দিনের মধ্যে আপনাকে অর্থছাড়ের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হবে।
এখন আলোচনা করি কোর্সেরার গ্রহণযোগ্যতা কেমনঃ
কোর্সেরা সম্পর্কে নতুন কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। বিনামূল্যে মানসম্মত ডিগ্রী লাভের ব্যবস্থা খুব কমই পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে কোর্সেরা’র গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপক। সাধারণত এই প্ল্যাটফর্মে আপনি যেই কোর্সটিই করুন না কেন সেখানেই উল্ল্যেখ থাকে আপনি কোথায় কোথায় সার্টিফিকেট ব্যবহার করতে পারবেন। এই যেমন, সিভি,রিজমি, লিংকড-ইন, চাকরিক্ষেত্র ইত্যাদি।
পরিশেষে বলা যায়, যখন হাতের কাছে মানসম্মত, অধুনিক, যুগোপযোগী শিক্ষার সুযোগ, তখন ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা আর নয়। প্রতিযোগিতার মঞ্চে নিজেকে একধাপ এগিয়ে রাখতে চটজলদি করে নিন দারুণ সব কোর্স। আর জানাতে ভুলবেন না আপনার অভিজ্ঞতার কথা।
Writer:–
Baitul Hikma
Intern, Content writing Department,
YSSE