কোনো একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন আপনার মানিব্যাগে কোনো টাকা নেই, ব্যাংক ব্যালেন্সও শূন্য। কিন্তু আপনার মনে কোনো দুশ্চিন্তা নেই, কারণ মূহুর্তেই আপনি আপনার ল্যাপটপ কিংবা ফোনে লগইন করে দেখতে পেলেন আপনার কাছে টাকা ঠিকই আছে। তবে সেটা আসলে টাকা নয়, টাকার ভার্চুয়াল রূপ। যেটি ধরা বা ছোঁয়া যায় না, তবুও ব্যাংক নোটের মতোই মূল্যবান এবং লেনদেনযোগ্য।
হ্যাঁ! অদূর ভবিষ্যতে এই দৃশ্যপট হয়তো বাস্তবতায় রূপ নিতে যাচ্ছে। জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবস্থার প্রচলন যা ক্রিপ্টোকারেন্সি নামে বর্তমানে বহুল আলোচিত।
ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো এনক্রিপশন এলগরিদমের সাহায্যে তৈরী বিশেষ এক ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবস্থা৷ ভার্চুয়াল জগতে লেনদেন করার জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো এক ধরনের বিকল্প পদ্ধতির ডিজিটাল মুদ্রা যেটির মাধ্যমে অনলাইনে বিভিন্ন লেনদেন করা সম্ভব। এটি ভার্চুয়াল কারেন্সি বা ডিজিটাল কারেন্সি নামেও পরিচিত।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহৃত হয় ব্লকচেইন প্রযুক্তি এবং ক্রিপ্টোগ্রাফির মাধ্যমে। ক্রিপ্টোগ্রাফি এই মুদ্রার লেনদেন সুরক্ষিত রাখে এবং এই লেনদেন হয়ে থাকে অনলাইনে P2P (পিয়ার টু পিয়ার) প্রক্রিয়ায়। ক্রিপ্টোকারেন্সির হিসাব রাখা হয় ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয় ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম দ্বারা, যা প্রতিনিয়ত আপডেট হতে থাকে।
ক্রিপ্টোকারেন্সির বিশেষত্ব হলো, এটি কোনো কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের তথা ব্যাংক ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত এবং নির্ভরশীল নয়। আবার অন্যান্য মুদ্রা ব্যবহারে যেমন রাষ্ট্রের সরকার কে জবাবদিহি কিংবা অনুমতির প্রয়োজন পড়ে, ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রবাহ কিংবা নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রকার জবাবদিহিতার প্রয়োজন হয়না৷ যার কারণে এই ডিজিটাল মুদ্রা এখনো পৃথিবীর সব দেশে বৈধতা পায়নি।
বিটকয়েনের মাধ্যমে জাপানের নাগরিক সাতোশি নাকামোতো ২০০৯ সালে ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রচলন শুরু করেম যা প্রথম লোকনজরে আসে ২০১৩ সালে। ২০১৭ সালে ক্রিপ্টোকারেন্সি আরও বেশি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ২১ হাজার ৯১০টি ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে তন্মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি হলো বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, টেদার, বাইন্যান্স, ডগকয়েন ইত্যাদি।
২০১৭ সালে দাম বাড়ার মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপক সাড়া ফেলে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন। এর ধারাবাহিকতায় ক্রিপ্টোকারেন্সিতে মানুষের আগ্রহ ক্রমে বাড়ছে। বর্তমানের তরুণ সমাজ যারা লাভবান খাতে অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছেন এই ডিজিটাল মুদ্রাকে। ২০২২ সালে ডগকয়েন নামের একটি ক্রিপ্টোকারেন্সির জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া হয়েছে টুইটারের বর্তমান মালিক এলন মাস্কের প্রচারণায়।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে, ক্রিপ্টোকারেন্সির এই জনপ্রিয়তা কি সবসময়ই এমন থাকবে?
এই বিষয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন অনেকেই। কেননা ২০২২ সালে বিটকয়েনের মূল্যমান অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রায়োগিক ব্যবহারের বিভিন্ন কমতি, জটিলতা ও নানা সমস্যার দিক আলোচনা, সতর্কবার্তা ও প্রশ্ন করে আসছে অর্থ, মুদ্রাবাজার বিশেষজ্ঞরা।
ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যাপারে উদ্বেগের কারণগুলো একেবারে সুস্পষ্ট। প্রথমত, এই মুদ্রার বাজার কখনোই স্থির নয়, যার কারণে আর্থিক লোকসানের ঝুঁকিও প্রবল। দ্বিতীয়ত, ক্রিপ্টো মুদ্রার লেনদেনকারীদের যেহেতু চিহ্নিত করা যায় না, তাই এ মুদ্রা ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়ে যায়। সর্বোপরি এখনো ক্রিপ্টোবিষয়ক যথাযথ আইনের অভাব রয়েছে।
বিশ্বসেরা ধনকুবের ওয়ারেন বাফেটের মতে ‘সাধারণত ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে আমি প্রায় এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি, এগুলোর সমাপ্তি ঘটবে মন্দে। আমরা মানুষেরা কেউ-ই বর্তমানে প্রকৃত অর্থে মনোনিবেশ করি না, হয় অতীত নিয়ে চিন্তিত, আর না হয় ভবিষ্যৎ নিয়ে কৌতূহলী আমাদের মনোজগৎ। কিন্তু ক্রিপ্টো জগতের ভবিষ্যৎ কি হবে আসলে কৌতূহলী মন ও মস্তিষ্ক নিশ্চিত করে বলতে পারবে না।’
পরিশেষে একটি বিষয়ে আমরা সকলেই প্রায় একমত যে, ক্রিপ্টোর মতো নতুন মুদ্রাবাজারের ঝুঁকিকে পরিমাপ করে বিনিয়োগ করা মোটেও সহজসাধ্য নয়। আজকের মূল্যমান বাড়তে থাকা ক্রিপ্টোকারেন্সি আগামীকাল যে মুখ থুবড়ে পড়বে না তা নিয়ে আশ্বাস আপনাকে কেউ দিবে না। বরং আমাদের সকলের এই ডিজিটাল মুদ্রার ব্যাপারে সতর্কতার সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
আরো ব্লগ পড়তে চাইলে ক্লিক করুন লিংকে:
Writer
Muhammed Mahadi Hasan
Intern
Content Writing Department