ধরুন, আপনি একদিন নিজের বিছানায় ঘুমালেন এবং পরদিন আপনার ঘুম ভাঙল অচেনা অজানা এক শহরে, আজানা এক ঘরে, অচেনা একজনের শরীরে। কেমন হবে ব্যাপারটা? 

“Kimi No Na Wa” বা ইংরেজিতে “Your Name” এমনই কাহিনী নিয়ে নির্মিত একটা অদ্ভুত সুন্দর জাপানিজ এনিমে ফিল্ম। ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সাড়া জাগানো এবং বক্স অফিসে সর্বোচ্চ কামাই করা এনিমে মুভি এটি। রটেন টমেটো তে ৯৮% ফ্রেশ রেটিং ও আইএমডিবি’র টপ ১০০ মুভির লিস্টে থাকায় এটি যেকোনো গড়পড়তার মুভি থেকে বেশ উপরে অবস্থান করবে, সেটা আর বলার অপেক্ষা থাকেনা।

গল্প শুরু হয় ‘তাকি’ আর ‘মিতসুহা’ এর অদলবদলের মাধ্যমিতসুহা ও তাকি দুইজন ১৭ বছর বয়সী মেয়ে ও ছেলে। দুজনেরই জন্ম তারিখ ১ ডিসেম্বর। মিতসুহা ইতোমোরি নামক গ্রামে বাস করে। তাকি টোকিও শহরে বাস করে। দুজনেই নিজ নিজ লাইফস্টাইল নিয়ে বিরক্ত। তাই মিৎসুহা স্বপ্ন দেখে নেক্সট লাইফে সুদর্শন ছেলে হয়ে টোকিও শহরে জন্মাবে। কিন্তু পরের দিন যে এটাই সত্যি হবে কে জানতো!

এদিকে তাকিও নিজের শহুরে জীবন আর কাজ নিয়ে বিরক্ত। তাকির ইচ্ছে সে যদি শহুরে জীবন ছেড়ে কোনো গ্রামে বা মফস্বলে নিরুদ্বেগ জীবন কাটাতে পারতো! হঠাৎই একদিন ঘুম থেকে উঠে তাকি বুঝতে পারে সে নিজের বাসস্থান টোকিও থেকে অনেক দূরে অচেনা এক গ্রামের এক মেয়ের শরীরে চলে এসেছে। একইভাবে টোকিও শহরে থাকা তাকি’র শরীরের ভেতরে নিজের সত্ত্বাকে আবিষ্কার করে মিতসুহা। দুইজন মানুষের আত্মা বদল করে দিলে যেমনটা হয়, ব্যাপারটা অনেকটা তেমন। গ্রামে থাকা মিতসুহার স্বপ্ন থাকে রাজধানী টোকিও দেখার, অপর দিকে স্কুল, চাকরি এসবের ব্যস্ততা থেকে একটু হাফ ছেড়ে বাঁচতে চায় তাকি নিজেও। এই অদলবদল যেন তাদের সামনে সেই সুযোগকেই খানিকটা অদ্ভুতভাবে এনে দেয়। কিন্তু এরা না একে অপরকে চেনে, না একে অপরের বসবাস – জীবনযাপন বা পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ব্যাপারে কিছুই জানে। প্রথম প্রথম দুইজনেরই এভাবে একে অপরের জীবনকে যাপন করতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়, কিন্তু একটা সময়ে এসে এতে অভ্যস্ত হয়ে যায় দুজনেই। এই অদলবদল, একদিন -দুদিন পর পর হতো তাদের মাঝে।

যখন একজন অন্যজনের শরীরে চলে যেতো, তারা সারাদিনের কাজকর্মের ব্যাপারে নোট করে রাখতো যাতে পরের বার তাদের নিজ নিজ শরীরে থাকা অবস্থায় অপরজনের করে যাওয়া কর্মকাণ্ড বুঝে নিতে সুবিধা হয়। 

বেশ ভালোই চলছিলো তাদের এমন জীবনযাত্রা। কিন্তু একদিন হঠাতই সব বন্ধ হয়ে যায়। দিন-সপ্তাহ পার হয়ে যায়, তাকি অপেক্ষা করে আবার মিতসুহার সাথে এমন অদলবদলের, কিন্তু তা আর হয় না। যে ফোন নাম্বার তার ফোনে মিতসুহা সেভ করে রেখে যায়, সেখানে মিতসুহাকে খুঁজে পায় না তাকি। মিতসুহার সাথে নিজের এমন বিচ্ছিন্নতা মেনে নিতে না পেরে তাকি বের হয়ে পড়ে তাকে খুঁজতে। মিতসুহার গ্রামের নামও মনে থাকেনা তাকির, তার সমগ্র খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা স্মৃতি থেকে আঁকা ওই গ্রামের কিছু স্কেচ এর উপরেই নির্ভর করে থাকে। 

সে আদৌ মিতসুহাকে খুঁজে পায়? কেন মিতসুহা ভুলে যায় তাকির নাম? তাকির হাতে বাধা রিবনটা আসলে কার? জানতে হলে দেখতে হবে কিমি নো না ওয়া।

মুভির পরিচালক ”মাকোতো শিনকাই” মুভিটাকে এত বেশি অসাধারণ বহমানতা দিয়েছেন, যা একটা সেকেন্ডের জন্যে বিরক্তির উদ্রেক করবে না। ঠিক একই নামে পরিচালক শিনকাই এই অ্যানিমে রিলিজের এক মাস আগে একটি বই লিখেছিলেন। বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর  পাঠকের বেশ ভালো প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলেন। মূলত the Great East Japan Earthquake of 2011 থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে মুভিটি বানিয়েছেন। তাই যথাসম্ভব মুভিতে সবকিছুই রিয়েল দেখানো হয়েছে। শুধু নাম রূপকে দিয়েছেন।  

বক্স অফিস ও পুরুস্কারের কথা বললেও মুভির গান ও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, পুরো মুভির প্রতিটি সেকেন্ডের সুক্ষ্ম থেকে সুক্ষ্মতর গ্রাফিক্সের কাজ, কালার কম্বিনেশন মুভিটিকে নিয়ে গিয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়।

 

এরকম আরও অনেক ব্লগ পড়ার জন্য ক্লিক করুন

 

লেখক,

আতিয়া আলম নিসা 

ইন্টার্ন(Batch-10), কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট। 

YSSE

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *