অলিভার টুইস্টঃ অপরাধ ও দারিদ্র্যের চিত্রায়ন
জীবন বয়ে চলা নদীর মতো। এ নদীর প্রতিটি বাঁকেই রয়েছে গল্প। সংগ্রাম, সুখ-দুঃখ, দারিদ্রতা, অপরাধ, অপমান, লাঞ্চনার গল্প। জীবনের গল্পের শুরু থেকে কৈশোরকাল পুরোটা সময় যদি দুঃখ, দারিদ্র্যতা,অপরাধ, লাঞ্চনার হয়, তবে কেমন হবে বলুন তো? ক্ষুধার সংগ্রাম থেকে লুকিয়ে পালিয়ে যদি অনিচ্ছাসত্ত্বেও অপরাধের জগতে চলে যেতে হয় তাহলেই বা কেমন হবে?
কথা বলছি, চার্লস ডিকেন্স এর লেখা অলিভার টুইস্ট নোবেল নিয়ে। যেখানে নায়ক চরিত্র অনাথ বালক, অলিভার টুইস্ট এর জন্ম হয় প্রতিকূলতা আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। হয়ত প্রকৃতি নিজেই তার অস্তিত্ব পছন্দ করছিল না। আর এখান থেকেই শুরু হয় অলিভার টুইস্টের সংগ্রামের জীবন চলা। অনাথ আশ্রমে কাটানো ৯ টি বছর পর অলিভারকে নামতে হলো পরিশ্রমের জগতে। অর্থাৎ তাকে কাজ করে খেতে হবে আর কাজের বিনিময়ে পাবে খাদ্য যা প্রয়োজনের তুলনায় অতিসামান্য। এই স্বল্প খাবারে অমানুষিক পরিশ্রম সহ্য করতে না পারে ১২ বছর বয়সী বালক অলিভার পাড়ি জমায় লন্ডনে, ভালো জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয় নি। নিজের অজান্তেই অনুপ্রবেশ ঘটে অপরাধের কালো জগতে। আতংক সৃষ্টিকারী বাম্বল,নোয়া, মিসেস স্পেয়ারবেরি এসব লোকদের থেকে লুকিয়ে পালিয়ে যেনো সে পড়েছিলো মুখোশের আড়ালে থাকা একদল হিংস্র লোকেদের মাঝে। যাদের প্রধান কাজই ছিলো চৌর্যবৃত্তি। আর বাধ্য হয়ে অলিভারকেও এসব কাজের ট্রেনিং নিতে হয়েছিলো। শুধু তাই নয়, অলিভার যখন সৎ ভাবে জীবনযাপনের সুযোগ পেলো, তখন পুনরায় ইহুদী ফাজিনের ফাদেঁ পড়ে যায় এবং সেইসাথে যুক্ত হয় বিশ্বাসঘাতকতার মতো জগন্য অনুভূতি। আত্নগ্লানিতে ভুগতে থাকা বালক অলিভার মুক্তির উপায় খুঁজতে গিয়েও যেন গোলকধাঁধার প্যাঁচে আটকে যাচ্ছিল বারংবার । খাচাঁয় বন্দি থাকা পাখি যেমন মুক্তির জন্য ছটফট করে, অলিভারের অবস্থাও ঠিক তেমনটিই ছিলো। এক্ষেত্রে খাঁচাটি হলো অপরাধের কালো জগৎ।
এখানেই প্রশ্ন অলিভারের বাকি জীবন কি অপরাধের জগত বিচরণে কাটবে নাকি অলিভার টুইস্টের জীবনেও টুইস্ট আসবে? আর তা জানতে অবশ্যই আপনাকে অলিভার টুইস্ট বইটি হাতে নিতে হবে, পড়তে হবে।
অলিভার টুইস্ট নোবেলের লেখক চার্লস ডিকেন্স এর জীবনের শুরু, শৈশবকাল খুব একটা সুখকর ছিলো না। দারিদ্র্যের প্রবল করাঘাতে জর্জরিত, ২২ বয়সী ডিকেন্স যখন লন্ডনের রাস্তায় রাস্তায় কাজের জন্য ঘুরছিলেন, তখনই তিনি লুকিয়ে, গল্প লেখা শুরু করেন। তার লেখা গল্প যেদিন লন্ডনের প্রত্রিকায় প্রকাশিত হয় সেদিন তিনি আনন্দে দিশেহারা হয়ে লন্ডনের রাস্তায় রাস্তায় হেটেঁছিলেন। কিন্তু অভুক্ত অনাহারে ভুগতে থাকা ডিকেন্স সেই গল্প কিংবা পরবর্তী ৮ টি গল্পের জন্য একটি টাকাও পান নি। কিন্তু কলম থেমে থাকে নি তার, তিনি লিখে গেছেন। সৃষ্টি করে গেছেন গ্রেট এক্সপেক্টেশন, দ্যা পিকউইক পেপারস, ড্যবিড কপারফিল্ড এর মতো কালজয়ী উপন্যাস। এসব গল্প যেনো তারই জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চিত্র। চার্লস ডিকেন্সের জীবনসংগ্রাম ঠিক কতটা কঠিন ছিলো তারই এক খন্ড চিত্র যেন অলিভার টুইস্টে চিত্রিত হয়েছে সুনিপুন দক্ষতায়। ১৮৩৮ সালে প্রকাশিত হওয়া এই নোবেলটি পরবর্তীতে ২০০৫ সালে সিনেমা আকারে প্রকাশিত হয়।
একটি কথা আমরা কম বেশি সকলেই জানি। প্রত্যেক সফলতার পেছনে রয়েছে হাজারটা ব্যার্থতার গল্প এবং শেষপর্যন্ত সফল তারাই যারা ব্যার্থতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবতা এতটাও সহজ না। এত সহজেও ব্যার্থতাকে বুড়ো আংগুল দেখানো যায় না। বিশেষ করে যদি সেখানে থাকে দারিদ্র্যের হিংস্র কড়ালথাবা এবং গোটা সমাজটায় যেখানে থাকে অন্ধ। আর এই হিংস্র চিত্রই যেনো ফুটে উঠেছে অলিভার টুইস্টে। গল্পটি এমনভাবে চিত্রিত হয়েছে, পাঠক যখন পড়বে তখন মনে হবে এবার হয়ত অলিভার টুইস্টের জীবনে টুইস্ট আসতে চলেছে কিন্তু লেখক পাঠককে হতাশায় ফেলে, অলিভারকে আবারও দুঃসহ জীবনে নিয়ে যায়।
এরকম আরও ব্লগ পড়তে ক্লিক করুন
উম্মে হাবিবা চৌধুরী
ইন্টার্ন
কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE