হুমায়ূন আহমেদের হিমুকে তো আমরা কম বেশি সবাই চিনি। একজন ভবঘুরে পাগলাটে যুবক; যে খালি পায়ে রাস্তায় রাস্তায় হাঁটে, মহাপুরুষের মতো অন্যের জীবনে হঠাৎ আবির্ভূত হয় আর সবরকম সমস্যা সমাধান করে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়, যাকে নিয়ম কানুনের বেড়াজাল দিয়ে বেধে ফেলা যায় না, যে স্বাধীনচেতা পাখির মতো উড়ে বেড়ায়, ঘুরে বেড়ায়। আজ কথা বলবো এমন এক মালায়লাম সিনেমা নিয়ে যার মূল চরিত্র চার্লির ভীষণ মিল রয়েছে হিমুর সাথে।
চার্লি সিনেমা শুরু হয় গ্রাফিক আর্টিস্ট তেসাকে দিয়ে। ভ্রমণপিপাসু, চঞ্চল মেয়ে তেসা তার বড় ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে বাড়িতে ফেরে ব্যাঙ্গালুর থেকে। কিন্তু বাড়ি ফিরে সে আবিষ্কার করে তার বড় ভাইয়ের বিয়ের পাশাপাশি তার নিজের বিয়েরও পাঁয়তারা চলছে পরিবারে। তেসার মা আমেরিকা ফেরত কুরুভিলার সাথে তার বিয়ের বন্দোবস্ত করে ফেলেছে। কিন্তু তেসা কুরুভিলাকে বিয়ে করতে রাজি হয় না। তাহলে কি করতে চায় সে? তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি জানতে চাইলে তেসা তার বড় ভাইকে উত্তর দেয়, কোনোরকম পরিকল্পনা ছাড়া জীবন কাটানোই তার পরিকল্পনা। তেসার মা বিয়ের জন্য চাপ দিলে তেসা পালিয়ে বান্ধবীর বাসায় উঠে। তারপর সেখান থেকে ফোর্ট কচিতে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে নিজের মতো সময় কাটাতে থাকে।
বাসাটা ছিলো অগোছালো, অপরিষ্কার আর পুরনো ভাড়াটিয়ার ফেলে যাওয়া অদ্ভুত সব জিনিসে ভর্তি। তেসা জানতে পারে বাসাটায় তারই মতো অদ্ভুত স্বভাবের রহস্যময় এক যুবক থাকত, যার নাম চার্লি।
ঘর গোছানোর সময় তেসা একটা অসম্পূর্ণ স্কেচবুক পায়, যেখানে চার্লি এঁকে রেখেছিল গত বছরের নিউ ইয়ারের রাতে ঘটা অদ্ভুত এক কাহিনী যেখানে চার্লির বাসায় এক চোর চুরি করতে আসে এবং চার্লি সেই চোরের সাথে বন্ধুত্ব করে দুজন মিলে চুরি করতে বের হয়। এবং সেই চোরের সাথে ঘুরতে ঘুরতে চার্লি মুখোমুখি হয় এক অপ্রত্যাশিত ঘটনার। কি সেই ঘটনা সেটা স্কেচবুকে খুঁজে পায় না তেসা। ব্যাপারটা তেসার কাছে এতই ইন্টারেস্টিং লাগে যে, বাকি গল্পটুকু জানার জন্য সে উদগ্রীব হয়ে পড়ে এবং বাকিগল্প জানতে চার্লিকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে।
চার্লিকে তেসা খুঁজে পায় না, কিন্তু পদে পদে চার্লির পরিচিত মানুষদের দেখা পায় সে। তাদের মুখে মুখে চার্লির প্রশংসা, নানারকম পাগলামির গল্প শুনতে শুনতে তার প্রত্যাশার পারদ আকাশচুম্বী হয়ে যায়। তাইতো তেসা দ্বিগুণ উৎসাহের সাথে চার্লিকে খুঁজতে থাকে। চার্লিকে কী শেষ পর্যন্ত খুঁজে পায় কিনা তেসা, তা জানতে হলে মুভিটা অবশ্যই দেখতে হবে।
চার্লি বা হিমু সমাজের এক অনাবিষ্কৃত চরিত্র যারা নিভৃতেই ভালোবাসা ও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়, জটিল জীবনকে সহজ করে তোলে, জীবনে বেঁচে থাকতে শেখায়। কারো জীবনে আচমকা ঢুকে তাদের খানিকটা চমকে দিয়ে, তাদের মুখে একটুখানি হাসি ফোটানোতেই হিমু বা চার্লির জীবনের সার্থকতা। চার্লির জীবনে কোনো কৃত্রিমতা নেই, সবার প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয় আর ছোট ছোট বিষয়ের মধ্যেও নিজের সুখ খুঁজে নেয়।
মালায়লাম ভাষার এই সিনেমায় চার্লি চরিত্রে দুলকার সালমান, তেসা চরিত্রে পার্বতী থিরুভতু ছাড়াও অভিনয় করেছেন অপর্ণা গোপীনাথ, টভিনো থমাস এবং শৌবিন শাহির। ৮টি কেরালা স্টেট পুরস্কারসহ এই সিনেমার ঝুলিতে রয়েছে Asianet Film Award for best actress এবং ৬টি IIFA Utsavam Award
একটা ইন্টারেস্টিং বিষয় দিয়ে ব্লগ শেষ করি। সাইফুদ্দিন শাকিল নামের বাংলাদেশী এক যুবক টুইটারে লিখেছিলেন, জীবনের এক কঠিন সময়ে তিনি চার্লি সিনেমাটি দেখেছিলেন এবং চার্লি সিনেমা তাকে ডিপ্রেশন থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করেছিল। দুলকার সালমানের চরিত্রটি তাকে এতই অনুপ্রাণিত করেছিল যে পরবরতীতে নিজের ছেলে সন্তানের নাম দুলকার সালমান রাখেন তিনি। টুইটারে দুলকার সালমানকে ট্যাগ করতে ভোলেননি এই দুলকার ভক্ত এবং মজার বিষয় হচ্ছে এই টুইটটি দুলকার সালমানের নজর এড়ায়নি। দুলকার সালমান তার ফিরতি টুইটে সকল বাংলাদেশীর প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে লিখেছিলেন, কলেজ জীবনে তিনি অনেক বাংলাদেশী বন্ধুর সাহচর্য পেয়েছেন যাদের সাথে এখনো তার যোগাযোগ রয়েছে।
এরকম আরও অনেক ব্লগ পড়ার জন্য ক্লিক করুন
লেখকঃ
আতিয়া আলম নিসা
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট।
YSSE