Ôভাষা আন্দোলনের উৎসভূমি ২১শে ফেব্রুয়ারী, প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত দুটি ভূখণ্ডের দুটি ভিন্ন ভাষার জাতিসত্তাকে মিলিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম থেকেই মাতৃভাষাকে কেন্দ্র করে সূচনা হয়েছিল।
আর এই ভাষা আন্দোলনকেই বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে মনে করা হয়।
এই প্রথম পদক্ষেপটিকে চির স্মরণীয় করে রাখার জন্য অনেক লেখক লিখেছেন উপন্যাস।
মনে করা হতো জহির রায়হানের লিখিত আরেক ফাল্গুনে প্রথম ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখা উপন্যাস কিন্তু ইতিহাস সেটিকে ভুল প্রমাণ করে নতুনভাবে আবিষ্কার করে “বীজাঙ্কুর” উপন্যাসটি।
জহির রায়হানের লেখার ১৫ বছর বছর পূর্বেই প্রকাশিত হয়েছিল এই উপন্যাসটি।
একুশের প্রথম দর্পন “বীজাঙ্কুর” উপন্যাসটি রচিত করেন মফস্বলের এক কেরাণী নাম-আব্দুল অদুদ চৌধূরী।
এই অদুদ চেীধুরীর পরিচয় উইকিপিডিয়ায় সার্চ করলে জানা যায় তাঁর পিতার নাম মরহুম আব্দুল হাকিম চেীধুরী, মাতা খোদেজা বেগম এবং তাঁর জন্ম রসুল পুর গ্রামে কুমিল্লা জেলায়।
তাঁর জন্ম ১ লা জানুয়ারী ১৯১৩ সালে। রসুলপুর জুনিয়র মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে, মাধ্যমিক শিক্ষা কুমিল্লা বঙ্গ বিদ্যালয় (বর্তমানে কুমিল্লা হাই স্কুল) হতে সমাপ্ত করে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উর্ত্তীন হন।
জীবন জীবিকার সংগ্রামের পর্বে তিনি ত্রিপুরা কালেক্টরেট (বর্তমান জেলা প্রশাসক) কার্যালয় নকল নবিস এর কাজ যোগদান করেন। সরকারী চাকুরীজীবী হয়েও তিনি ভাষা আন্দেলনে বলিষ্ট ভূমিকা রাখেন। যার ফলাফলও খুব তিক্ত ছিল। তাকে চাকুরী ছাড়তে হয়েছিলো এই উপন্যাসটির জন্য।
জানা যায়, ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন শেষ হলেও তার রেশ শেষ হয়নি। যার ছোঁয়া পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন ও তৎসময় বাম ধারার রাজনীতির সাথে লেখল অদুদ চৌধূরীর গোপন সম্পর্ক।
তার সুগভির চিন্তা থেকেই তিনি ১৯৫৪ সালে লিখেন এদেশের প্রথম একুশের উপন্যাস ‘বীজাঙ্কুর’। উপন্যাসটি প্রকাশের পরই নিষিদ্ধ হলো। গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হলো। অদুদ চৌধুরী গ্রেফতার হলেন এবং তিনি চাকুরি হারালেন।
দ্বিতীয় বার ‘বীজাঙ্কুর’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৭ সালে। তবে ‘বীজাঙ্কুর’ নামে নয়; এবার উপন্যাসের নাম করন করা হলো “তুমি কি সুন্দর” এই নামে।
কিন্তু ভিতরের মূল আখ্যান হুবাহু ঠিক রাখা হয়। শিরোনাম পাল্টানোর কারন ‘বীজাঙ্কুর’ কে সরকারের নিষিদ্ধ ঘোষনা, লেখকের উপর গ্রেফতারী পরোয়ানা এবং লেখককে চাকুরিচ্যুত করা। লেখককে রক্ষা করার জন্য বইটি হযরত মুহাম্মদ স:কে উৎসর্গ করা।
এই উপন্যাসটির অনুসঙ্গে রয়েছে গ্রামীন পটভূমি। নায়ক এক অন্ধ গায়ক মতিন। গায়ক মতিন মাতৃ ভাষা বাংলার গান গেয়ে ভাষা আন্দোলনের সময় প্রাণ দেয়। রেহেনার ভালবাসার গল্প, আরো আছে মিনু, মাহমুদ, নয়নী, পারভিন, শ্যামল নাছির, এর ঘটনা এবং রবিন্দ্রনাথের অনবদ্য প্রসঙ্গ।
ঘটনার বর্ণণায় নজরুল ও জসিমউদ্দিনের কবিতার প্রয়োগ এবং বিণ্যাসে মধুসুধন, শরৎচন্দ্র, মাইকেল এর স্ত্রী হেনরিয়েটার কথা তার সাহিত্য জ্ঞানের কথা জানিয়ে দেয়। আরো আছে ৫০ এর মনমন্তরের ছবি। উপন্যাসের শব্দের গাথুনি ও বাক্য বিন্যাস সহজ সরল। ভাষার কোন কাঠিন্য নেই। লেখক অদুদ চৌধুরী ছিলেন প্রচন্ড ভাবে রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবান।
গল্পের শেষে মতিন শহীদ হয়।
এখানেই উপন্যাসের সমাাপ্তি।
তবে শেষ পাতায় এবং আবদুল অদুদ লিখেছেন : মতিন তাহার বুকের তাঁজা খুন মিশিয়ে যে বীজ বপন করে গেছে তা ‘বীজাঙ্কুরিত’ হবে।
বীজাঙ্কুরের সন্ধানে মিলেছিলো কুমিল্লা বেতার কেন্দ্রের নাট্য প্রযোজক সৈয়দ মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন বুড়িচং উপজেলার আনন্দপুর ইত্তর পাড়াস্থ দশ দিগন্ত পাঠাগারে। যা প্রকাশিত হয়ে ছিল ১৯৫৭ সালে (যা ছিল বীজাস্কুরের ২য় প্রকাশনা) বইটির অবস্থা এতটাই লাজুক ছিল যে পাতা উল্টালেই ছিড়ে যেত।
তাই তিনি বীজাস্কুর পুনঃ প্রকাশনার উদ্দ্যেগ নেন এবং ২০১৯খ্রিঃ বইটি পুনঃ প্রকাশিত হয়।
মহান ভাষা আন্দোলন এখন বাঙালির কণ্ঠ ছেড়ে বিশ্বকণ্ঠে। বিশ্বের অন্য ভাষাভাষি লােকেরা মর্যাদা দেয় একুশের। সেই ভাষা সংগ্রাম ও প্রাণ বিসর্জনকে জানতে এবং পরের প্রজন্মকে জানাতে এসব মূল্যবান লেখা আমাদের সংরক্ষণ করা অতীব জরুরী।
এরকম আরও অনেক ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন।
লেখিকা
দীপান্বিতা চাকমা
ইন্টার্ন,কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট,
YSSE