জ্ঞান ফেরার পর কাউকে নিজের মুখের উপর ঝুঁকে থাকতে দেখে উঠে বসল আইরিন। মাথার পিছনে তীক্ষ্ণ ব্যাথায় উহ্ করে উঠল সে। 

উহু একদম উঠবে না, চুপচাপ শুয়ে থাকো—জ্যাক বলল।

চারপাশ দেখে আইরিন বুঝল হাসপাতালে আছে সে।

জ্যাককে জিজ্ঞেস করতেই পুরো ব্যাপারটা বুঝল সে।

জ্যাক ভিক্টিমের ফোন ফরেন্সিকে দিয়েছিল। সেখানে এনালাইসিস করে জ্যাক ভিক্টিমের ফোন আর পোশাকের মধ্যে কিছু বিচিত্র ধরনের শ্যাওলা আর মাটি পেয়েছিল এবং সেগুলোর ধরন দেখে সে বুঝে গিয়েছিল এগুলো এই পুরাতন চার্চের। 

তাই জ্যাক রাতের বেলা চুপি চুপি ঐ চার্চে গিয়েছিল তদন্ত করতে। সে সেখানে কয়েকজনকে একত্রে সাধনা করতে দেখলেও কিছুই বুঝতে পারে নি। এরপর সভা শেষ হওয়ার পর সে যখন গোপনে সেখান থেকে বের হচ্ছিল তখনই আইরিনকে একটা থামের পেছনে পড়ে থাকতে দেখে সে। আইরিনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে হসপিটালে। 

আইরিনকে বার বার জিজ্ঞেস করেও কোন সদুত্তর পায় না জ্যাক। কারন পিছন থেকে আঘাত করায় জ্ঞান হারানোর পূর্বে কিছুই দেখতে পারে নি আইরিন।

 

এরপর কেটে গেল কয়েক সপ্তাহ। 

 লিসা হত্যা কেসে কোন সুরাহা করতে পারেনি পুলিশ। তবে অন্য কয়েকটি স্টেটে একই প্যাটার্নে বেশ কিছু লাশ পাওয়া গিয়েছিল এই তথ্যটা তদন্তের মাধ্যমে জানা যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে সব ভিক্টিমই সিঙ্গেল বা একা থাকে এমন মহিলা।

 

এর মধ্যে আইরিনের প্রতিবেশীর সাথে তার খাতির হয়ে গিয়েছে।

চার্চের ঐ ঘটনার পর থেকে ঐ মহিলার ব্যাপারে ঘাটাঘাটি করে,খোঁজ খবর নিয়ে অনেক কিছুই জানতে পেরেছে আইরিন। 

মাথায় আঘাত পাওয়ার পর থেকে মহিলার সেবা-যত্নে খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠে সে।

 

মানতে হবে মহিলার মাঝে চমৎকার সম্মোহনী ক্ষমতা আছে, যে কেউ মুগ্ধ না হয়ে পারবে না। হাসি-খুশি,মিশুক এই মানুষটার সাথে কেউ না মিশে পারবে না।

ওনার নাম মারিয়া, বিধবা ও নিঃসন্তান।

উনি আইরিনকে বিভিন্ন অদ্ভুত সুন্দর জায়গায় নিয়ে যাওয়া, নিরিবিলি পরিবেশে ক্যাম্পিং ও করতে নিয়ে যায়। তবে

উনি তেমন একটা লোক সমাগমে যাওয়া পছন্দ করেন না।

 

আজ উনি উনার বাড়িতে আইরিনকে দাওয়াত দিয়েছেন মজার এক জিনিস দেখাবেন বলে। আইরিনও তাই রাজি হয়ে গেল। সন্ধ্যার পর মিসেস মারিয়ার (প্রতিবেশীর) বাড়িতে গেল সে। 

 

আড্ডা আর খাবার খাওয়া শেষে নিজের কিছু পুরোনো দিনের লিখা রোমান্টিক চিঠি ও ডায়েরি বের করে আইরিনকে পড়তে বললেন মিসেস মারিয়া আর তিনি গেলেন রান্নাঘরে কফি বানাতে। 

 

কফি বানানোর পর রুমে এসে দেখেন আইরিন মাথা ধরে বসে আছে, ওর চোখে শূন্য দৃষ্টি, কেমন যেন দিশেহারার মতো বসে আছে সে। তা দেখে ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি ফুটে উঠল মিসেস মারিয়ার। 

যাক অবশেষে শিকার ফাঁদে পা দিয়েছে।

অনেক দিন পর আবার খাবার খাওয়া যাবে।

 

মিসেস মারিয়া আইরিনকে নিয়ে বেসমেন্টের দিকে যাচ্ছে। আইরিন তাকে সম্মোহিতের মতো অনুসরণ করছে যেন তার নিজের সকল বোধ বুদ্ধি লোপ পেয়েছে।

বেসমেন্টে পৌঁছানোর পর আইরিনকে একটা শুইয়ে দিয়ে সিরিন্জ,আইভি টিউব ইত্যাদি বাক্স থেকে বের করছিল মারিয়া যেন নিশ্চিন্তে, এক ফোঁটাও অপচয় না করে আইরিনের শরীরের সমস্ত রক্ত বের করে নিতে পারে; অন্তত কয়েক সপ্তাহের পিপাসাটা মিটানো যাবে।

 

এসব ভাবতে ভাবতে খেয়াল করেন নি কখন পিছনে নিঃশব্দে আইরিন এসে দাঁড়িয়েছে।

ঘাড়ের পিছনে সুঁইয়ের খোঁচায় পিছন ফিরে তাকাতেই চোখের সামনে সব কিছু অন্ধকার হয়ে এল মিসেস মারিয়ার। 

 

আইরিনের ঠোঁটে মুচকি হাসি দেখা দিল।

সে প্রথম থেকেই সব জেনে গিয়েছিল, তার আশেপাশের সব লোকজনের সব ইতিহাস, সবকিছুই সে নিজে খুঁজে বের করে। অবশ্য সেটা নেহাত কৌতুহল বা সাবধানতার জন্য নয় বরং সহজেই শিকার বেছে নেয়ার জন্য 

এবং নিজের রক্তের এই নেশা, চাহিদা মেটানোর জন্য। 

সে অবশ্য মিসেস মারিয়ার মতো নির্দোষ মানুষকে শিকার বানায় না বা তার মতো রেনফিল্ড সিনড্রোমের রোগী নয়।

 

সে অপরাধী আর নিকৃষ্টদের তার টার্গেট বানায় এবং এভাবেই সে তার আসক্তি আর নেশা মেটায়।

 

শিকারি যখন নিজেই শিকার হয় তখন তার চেয়ে উপভোগ্য জিনিস আর কি হতে পারে!

 

এরপর….

ঘড়িতে রাত ১২ টা। টেক্সাসের আকাশে আজও মস্ত বড় চাঁদ উঠেছে। হয়ত আজ পূর্ণিমা। আইরিন কফির মগ হাতে নিয়ে বেলকনিতে এসে বসল। আয়েশি ভঙ্গিতে চুমুক দিচ্ছে কফিতে।

বরাবরের মত স্পিকারে (Why Don’t We) এর গান বাজছে….

 

I met her on a Monday evening

She was standing outside of the park and ride

And I said, “Hey ma, where you been?”

“Been looking for a woman like you for all my life”

And she said, “Hola, talk to me

“Before I have to leave”

And one day we could be

Maybe more than two lost souls just passing by

 

Knew I was falling when I looked inside your eyes

She said, “I know you are, but what am I?”

 

Tell me, have you seen a sunset

Turn into a sunrise?

Kiss right through the night?

‘Cause we should try that sometime

Hold you ’til the mornin’

And if I said I’m fallin’

Would you just reply

“I know you are, but what am I?”

 

What am I?

(Ah-ooh)

What am I?

 

—সমাপ্ত—

 

আমাদের আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

 

লেখক

 

Kulsuma Bahar Bethi 

 

ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

 

YSSE