Youth School for Social Entreprenure” আয়োযিত “World Youth Skills Day” উপলক্ষে “Turn your Flame into Achivement” ক্যাম্পেইন আজ আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে এমন একজন উদ্যোক্তার সাথে যিনি অতুলনীয়ভাবে মেহেদি দিয়ে হাতের কারুকার্যের সাহায্যে মাতিয়ে তোলেছেন পুরো সিলেট। শুনতেই অবাক লাগে কিভাবে একজন মেহেদি দিয়ে পুরো একটা শহরকে মাতিয়ে তোল্লেন। চলেন তাহলে জেনে নেয়া যাক সেই আর্টিস্টের রহস্যকে,

 

হেমিলোনের বাশিওয়ালা যেমন বাশি বাজিয়ে রাজ্যের সকল বাচ্চাকে নিয়ে চলে যায় ঠিক তেমনি মেহেদি আর্টিস্ট দেওয়ান উনজিলা আপু মেহেদি দিয়ে সিলেটের সকল কনেসহ সকল মেয়েদেরকেও মাতিয়ে তোলেছেন হাতের যাদুতে। 

বেড়ে ওঠা ও পড়াশোনাঃ

সিলেটের এক আভিজাত্য শহর শ্রীমঙ্গল থেকে বেড়ে ওঠা দেওয়ান উনিজিলা আপু পড়াশুনা শুরু করেছিলেন শাহ্‌ মোস্তফা জে. আই. উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। এখানে নার্সারি থেকে ৫ম শ্রেনি পর্যন্ত অধ্যয়নরত ছিলেন। পরবর্তীতে দি বার্ডস রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়েন। মায়ের চাকুরির সুবাধে সিলেট শহরে স্থানান্তর হয়ে সুনামধন্য স্ক্লার্সহোম স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করে বর্তমানে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করে স্নাতকত্তর করছেন। এই ছিলো সিলেটের একজন বিখ্যাত মেহেদি আর্টিস্টের শিক্ষাজীবন। 

মেহেদি আর্ট শুরু করা ও পথ চলার গল্পঃ 

 

অবিশ্বাস্যভাবে দেওয়ান উনজিলা আপু আনঅফিশিয়ালি মেহেদি আর্ট করা শুরু করেন যখন তিনি মাত্র ৫ম শ্রেনীর ছাত্রী। অনেক ছোট বেলা থেকেই মেহেদি আর্টের শখ ছিলো তার। কাজিনদের হাতে মেহেদি আর্ট করেই পথ চলা শুরু। পরবর্তিতে ২০১১ সাল থেকে পারিবারিক বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে কনের মেহেদি আর্ট করে এক ধাপ এগিয় আসেন। যদিও তার বর্তমান আর্টের তুলনায় নাকি সেই আর্ট অনেক হাস্যরসিকের সমতুল্য। যাইহোক, ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সিনিয়র আপুদের সাথে মেহেদি উৎসবের মাধ্যমে প্রফেশনাল যাত্রা শুরু করেন। অবশেষে ২০১৭ সাল থেকে আজ অব্দি এই আর্টিস্টকে সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখা গিয়েছে। এভাবেই এই আর্টিস্ট দক্ষতা অর্জন করে সাবলম্ভী হবার পথ চলা শুরু করেন।

সন্তানের বেড়ে ওঠা ও তার সাফল্যের পিছনে সর্বদা মায়েদের অবদান অপরিসীম। এখানেও হীতের বিপরীতে কিছু হয় নি। কর্মট মায়ের মেয়ে দেওয়ান উনজিলা আপু মায়ের অনুপ্রেরনায় আজ অব্দি তার অতুলনয়ীয় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি তৎকালীন বিভিন্ন আর্টিস্টদের কাজ দেখে নিজের দক্ষতাকে সমৃদ্ধও করে তুলেছেন। এটা স্পষ্ট যে যেকোনো ক্ষেত্রে সফল হতে হলে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। উনজিলা আপুর ক্ষেত্রেও একি। শুরুর দিকে এই আর্টিস্ট কনেদেরকে হোম সার্ভিস দিতে গিয়ে অনেক চ্যাল্যাঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন রকম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তা কাটিয়ে উঠেন। তিনি এখন আর আগের মতো হোম সার্ভিস দেন না। যার কারনে আপাতোতঃ সিলেটের বাইরে কাজ করার খেয়াল না থাকলেও সিলেটের বাইরে থেকে অনেক সাড়া পান। 

দক্ষতা থেকে যেভাবে ব্যবসা শুরু করলেনঃ 

 

শখের বসে এই আর্টিস্ট অনেক সো-পিস, মোম, বুকমার্ক, ইত্যাদিতে মেহেদি আর্ট করে সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার করেন। যা অনেকেই কিনতে আগ্রহ দেখালে তিনি তা বিক্রি করাও শুরু করেন। শুনে অবাক হবেন যে তার ৪০ জনের মতো স্টুডেন্ট আছে যারা উনার কাছ থেকে মেহেদি আর্ট করা শিখছে অনলাইনে এবং অফলাইনে।  তিনি বলেছেন, 

“সময় ব্যবস্থাপনা করতে পারলে আরো শিক্ষার্থীর উদ্যোগ নিবো।”

যারা এই বিশিষ্ট মেহেদি আর্টিস্টকে সোশ্যাল মিডিয়াতে ফোলো করেন তারা নিশ্চই দেখেছেন, তার করা নতুনদের জন্য ছোট ছোট ভিডিও টিউটোরিয়াল। যেগুলো অনেকটাই সেটিস্ফাইং ভিডিওর মতো সাহায্য করে। এই টিউটোরিয়াল সম্পর্কে তিনি বলেন, 

“ছোট ছোট মেহেদির ভিডিও গুলা অনেকেই পছন্দ করেন।  আর আমি যেনো এগুলা বেশি বেশি পোস্ট করি এটাও চান অনেকে। কিন্তু খুব ঘন ঘন ভিডিও বানাতে পারি না ব্যস্ততার জন্য।” 

অলরাউন্ডার এই আর্টিস্ট, মেহেদি আর্ট, সো-পিস ইত্যাদি বিক্রি, টিউটোরিয়ালের পরে নিজের হাতে বানানো অর্গানিক উনজিলাজ মেহেদি নিয়েও অনেক পরিচিতি লাভ করেছেন সিলেটে। এই অভাবনীয় পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, 

“২০১৮-১৯ এ যখন আমি প্রাকটিস করতাম তখন কাভেরি মেহেদিটা ব্যাবহার করতাম। কিন্তু যখম আমি বিভিন্ন আর্টিস্টদের কাজ দেখতাম তখন মনে হতো এরা কত সুক্ষ কাজ করেন। আমি নিজে মেহেদি বানাতে পারলে এভাবে কাজ করতে পারতাম। এই চিন্তা থেকেই কিভাবে বানাতে হয়, কি কি লাগে, কই পাওয়া যায় মেহেদির ম্যাটেরিয়ালস গুলা, এইসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করতাম। ২০২০ এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটাই।”

এছাড়াও তিনি বলেন, 

 

“অন্যান্য বাজারের মেহেদির তুলনায় অর্গানিক মেহেদি অনেক স্পেশাল কারন এতে কোনো প্রকারের ক্যামিকেল নাই। আমি এতে রাজাস্থান এর বডি আর্ট কোয়ালিটি (BAQ) মেহেদি পাউডার এবং ল্যাবরেটরি সার্টিফাইড এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করি যেটা স্কিনের কোন ক্ষতি করে না।” 

তিনি এই আর্ট নিয়েই নিজের কাজ চালিয়ে যেতে চান যতদিন সম্ভব। 

# “কেন একজন ব্রাইড অন্য আর্টিস্টদের রেখে আপনার কাছে আসবে? কোন জিনিস আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে?” – এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 

“আমি আমার ডিজাইন যেনো খুব নিখুঁত হয় সেটা নিয়ে কাজ করছি। যেহেতু আমি চিকন কাজ করি সেটার জন্যই ব্রাইডরা আমার কাছে আসেন।”

একটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 

“একেক সময় একেক ধরনের ঘটনা ঘটে। কিছু কষ্টের ঘটনার সাথে  প্রচুর পজিটিভিটির ঘটনা আছে। আমি নেগেটিভ কিছু কখনো প্রোমট করি না। তাই কে কি করলো আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য সেগুলা কখনো শেয়ার করি না। কিন্তু আমার বেশিরভাগ ব্রাইড আপুরা অনেক অনেক ভালো।” 

এছাড়াও জুনিয়র আর্টিস্টদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 

“বেশি বেশি প্রাকটিস করে তোমরা সার্ভিস দিবা যাতে ব্রাইডরা সেটিস্ফাইড থাকেন। বিভিন্ন ধরনের কাজ এক্সপ্লোর করবা। ভিডিওগুলো বেশি বেশি দেখবা তাইলে টেকনিক্স বুঝতে পারবা।” 

সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ, দেওয়ান উনজিলা আপুর মতো নারী এই সমাজের বাকি সকল মেয়েদেরকে উৎসাহিত করে তোলে নিজের পায়ে দাড়ানোর জন্য। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই কোনো না কোনো প্রতিভা রয়েছে আর এই আর্টিস্ট প্রমাণ করে দিলেন যে, কোনো প্রতিভাই ছোট নয়। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অটল থাকলে যেকোনো কিছু নিয়েই মাথা উঁচু করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো সম্ভব। চলুন, “turn your Flame into Achievement” ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রতিভাকে সমৃদ্ধ করে তুলি। 

ফেইসবুক পেজঃ (1) Unzila’s Design | Facebook

এখানে ক্লিক করুন এরকম আরো সাফল্যের গল্প পড়ার জন্য। 

Writer

Zikra Tayab

Intern, Content writing department

YSSE